—ফাইল চিত্র।
গত বছর ১৯ এপ্রিল রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক জনেরও মৃত্যু হয়নি। এ বার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওই একই তারিখে মারা গিয়েছেন ৩৮ জন। তা হলে কি কোভিডে মৃত্যুর হার বেশি হতে চলেছে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, মৃত্যুহার কমে গিয়েছে বা বেড়ে গিয়েছে, এ নিয়ে মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। শুধু মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ কমানোয় নজর রাখতে হবে। শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলছেন, ‘‘গত বছরের ১৯ এপ্রিলের সঙ্গে এ বছরের ১৯ এপ্রিলের বিচার করলে মৃতের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এ বার যত জন আক্রান্ত হচ্ছেন, তার আনুপাতিক হারে মৃত্যুসংখ্যা কম। কিন্তু এটা বড় বিষয় নয়। এ বার কম সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। আগামী দিনে সেই সংখ্যক রোগী যদি ঠিক মতো চিকিৎসা না পান, তা হলে বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হবে।’’ চিকিৎসকেরা সকলেই স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, সংক্রমিতের সংখ্যা কমানো না গেলে এত সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো সারা দেশে নেই। ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘ শুধু রোগ নয়। শয্যার অভাবে চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ ক্রমশ কমে আসছে। আর তাতে স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্কটজনক রোগী চিকিৎসা না পেলে মারা যেতে পারেন।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখনও অনেকে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সেটিকে সাধারণ উপসর্গ ভেবে চুপ করে থাকছেন। পরবর্তী সময়ে তা যেমন কোভিড পজ়িটিভ যেমন প্রমাণিত হচ্ছে তেমনি ফেলে রাখার কারণে রোগও শরীরের ভিতরে জটিল আকার ধারণ করছে। এ হেন প্রবণতার কারণে সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তিনি বলছেন, ‘‘যাঁদের কোমর্বিডিটি আছে, তাঁদের সমস্যা প্রথমে গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। এ বারে ভাইরাসটি অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ফুসফুসে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে। নাক-গলায় থাকলে প্রথম ধাক্কাতেই সেটি বুঝে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে ফুসফুস পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ থাকে না।’’
দীপ্যমান জানাচ্ছেন, সংক্রমণ সকলেরই হতে পারে। তবে গত বারে দেখা গিয়েছে, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন লাগবে এমন সমস্যা বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দিচ্ছিল। এ বারে ৫০-এর কিংবা ৪০-এর কমবয়সিদের মধ্যেও এমন গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। দীপ্যমান বলেন, ‘‘এর কারণ মিউট্যান্ট ভাইরাসের বিবিধ রূপ। রাজ্যে ব্রিটেন স্ট্রেন আগেই মিলেছে। সেটির যে সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেশি, তা সকলেরই জানা। আর ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেশি হলেই ‘ভাইরাল লোড’ ও খুব বেশি হওয়া স্বাভাবিক। এর ফলে কমবয়সিদের অনেকেও আক্রান্ত হওয়ার পর সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাচ্ছেন।’’
জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই আবার জানাচ্ছেন, মানবশরীরে প্রতিরোধের (ইমিউনিটি) যে আগল রয়েছে তা সহজেই ভেঙে দিয়ে নতুন ‘মিউট্যান্ট স্ট্রেন’ সকলকে সংক্রমিত করছে। আগে গলায় বা নাকে ভাইরাসটি কয়েক দিন থাকত, সেখান থেকে ফুসফুসে যেত। এখন অনেক ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। নাক ও গলায় ভাইরাসটি প্রবেশের পরে স্থানীয় প্রতিরোধের আগলকে সহজেই টপকে সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে ফুসফুসে জল জমছে। তিনি বলেন, ‘‘এ সব কারণেই কমবয়সীদের ইমিউনিটি বেশি, তা এ বার বলার জায়গা নেই। আর কোভিড বিধি পালনের ক্ষেত্রেও কমবয়সিদের ইচ্ছা বা সুযোগ কম। মিটিং-মিছিলে যাওয়া থেকে অফিস বেরনো সবই করতে হচ্ছে। তাতে অনেক ক্ষেত্রেই করোনা বিধি মানা হচ্ছে না। ৪৫-এর উপরে যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন, তাঁরা গুরুতর রোগ থেকে বাঁচলেও তার কমবয়সিরা বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছেন।’’
এই পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কমবয়সিদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি আরও বেশি মাত্রায় কার্যকর হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। দীপ্যমানের কথায়, ‘‘শুধু এ শহরে আই ডি হাসপাতালের গবেষণাই নয়, আমেরিকায় আরও একটি গবেষণাও দেখিয়েছিল, ৬৫ বছরের কম বয়স্ক সঙ্কটজনক রোগীদের মধ্যে প্লাজমা থেরাপি খুব ভাল কাজ করে। তাই পুনরায় প্লাজমা দানে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।’’