বিবেক কুমার। ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যে করোনা-রোগীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের আবহে তাঁর বদলি প্রত্যাশিতই ছিল। তথ্য-বিভ্রাটের ‘দায়’ থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারবেন না, এমনটাও মনে করছিলেন প্রশাসনের অনেকে। তবু অন্য দফতরে বদলির প্রাক্-মুহূর্তে গানের সুরে যেন নিজের কথাই বলে গেলেন স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে তাঁর বিদায় সংবর্ধনায় ছিলেন অনেক প্রশাসক-চিকিৎসক। সুগায়ক বিবেক কুমার সেখানে ধরলেন কিশোরকুমারের গান, ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারোঁ, না ঘর হ্যায় না ঠিকানা...।’
১৯৯০ ব্যাচের ‘প্রধান সচিব’ পদমর্যাদার আইএএস অফিসার বিবেক কুমারকে স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব করেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যসচিব হচ্ছেন ১৯৯৮ ব্যাচের আইএএস নারায়ণস্বরূপ নিগম। তিনি ছিলেন পরিবহণসচিব। পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব প্রভাত মিশ্র পেলেন পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদন ৩০ এপ্রিল রাজ্যকে চিঠিতে জানান, কেন্দ্রের তালিকায় বঙ্গে রেড জ়োনের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০। প্রতিবাদ জানায় রাজ্য। প্রতিবাদপত্রে রাজ্যের করোনা-রোগীর সবিস্তার তথ্য দিয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার জানান, রেড ও অরেঞ্জ জ়োনে পশ্চিমবঙ্গে ‘কেস রিপোর্ট’ হয়েছে মোট ৯৩১টি! অথচ ৩০ এপ্রিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, ওই দিন রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭২! এই নিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সরব হয় বিরোধী শিবির। ওই মেডিক্যাল বুলেটিনে থাকা ‘অ্যাক্টিভ কোভিড কেস’, সুস্থ হয়ে ছাড়া পাওয়া এবং করোনা-কারণে অথবা কো-মর্বিডিটি বা অন্য রোগভোগে মৃতের সংখ্যার যোগফলের সঙ্গে কেন্দ্রে পাঠানো রাজ্যের করোনা-তথ্যে কেন অমিল, সেই প্রশ্ন ওঠে। বিড়ম্বনায় পড়ে রাজ্য সরকার সংশোধিত তথ্য দেওয়ার কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। বরং তার পর থেকে স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনের ধরন যায় বদলে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট শিবিরের অনেকে তখনই মনে করেছিলেন, এই ‘গোলমালে’ আঙুল উঠতে পারে স্বাস্থ্যসচিবের দিকেই।
আরও পড়ুন: রাজ্যে মৃত্যু ৮ জনের, কিছুটা স্বস্তি সুস্থতার হারে
আরও পড়ুন: জলপাইগুড়িতে করোনা-যুদ্ধে শামিল অন্তঃসত্ত্বা নার্স
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের চিঠির সঙ্গে অন্য এক কেন্দ্রীয় অফিসারের চিঠি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় তাড়াহুড়োয় কেউ তথ্যের যোগফলটা খেয়ালই করেননি। স্বাস্থ্যসচিবের বদলি প্রসঙ্গে এ দিন সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাননি কেউ। তবে প্রশাসনের অনেকে মনে করছেন, নতুন স্বাস্থ্যসচিবকে কাজ শুরু করতে হবে সঙ্কটের মধ্যে। বিদায় সংবর্ধনায় সকলেই বিবেক কুমারের প্রশংসায় সরব হন। ‘মুসাফির হুঁ’ গানের মধ্যে আমলা-জীবনের চলমানতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী স্বাস্থ্যসচিবও।