সন্ধ্যার দক্ষিণেশ্বরগামী মেট্রোয় পা রাখার জায়গা নেই। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রাস্তা তো নয়। যেন ‘করোনা’র জনসমুদ্র! পঞ্চমীর সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে বারবার থমকে যাচ্ছিল এক চিকিৎসকের গাড়ি। রাস্তার ভিড়ের দিকে তাকিয়ে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মানুষ কেমন স্বেচ্ছায় করোনার সমুদ্রে ঝাঁপ দিচ্ছেন। কেউ কি নূন্যতম সচেতন হবেন না?’’
এ বারের পুজোই যে আগামী দিনের সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে দ্বিমত নেই অধিকাংশ চিকিৎসকের মধ্যেই। তাঁদের একাংশ এখন বারবার প্রশ্ন তুলছেন, করোনার দু’টি ঢেউয়ে প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট কি মানুষ এত সহজে ভুলে গিয়েছেন?
পুজোর ভিড়ে গা ভাসানো সাধারণের উচ্ছ্বাস অবশ্য স্পষ্ট করে দিচ্ছে তাঁদের পরোয়াহীন মনোভাব। চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দুটি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে তাই কিছু হবে না, এই ধারণাটাই মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ, দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরেও বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ‘আর ভ্যালু’ এখনও একের আশেপাশে ঘুরছে। অর্থাৎ এক জন করোনা আক্রান্ত আর এক
জনকে এই রোগ ছড়াবেন।
এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এখন তো মৃদু উপসর্গ
বেশি হচ্ছে। আর তাতে করোনা পরীক্ষাও করাচ্ছেন না অধিকাংশই। ফলে সেই ব্যক্তির পুজোর ভিড়ে
মিশে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, যাঁদের ক্যানসার, কিডনির অসুখ-সহ অন্যান্য কোমর্বিডিটি রয়েছে,
তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। তাই দু’টি
ডোজ় নেওয়ার পরেও তাঁরা আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভবনা রয়েছে।
পুজোর দর্শনার্থীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক-ও নেই। সেই অবস্থাতেই মণ্ডপ বা আলোর সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে দেখা যাচ্ছে বহু মানুষকেই। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ওই সামান্য সময়েই যা অঘটন ঘটার ঘটে যেতে পারে। কারণ আমরা তো কেউই জানি না, পাশের মানুষটি করোনা আক্রান্ত কি না। তাই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতেই হবে।’’ কিন্তু অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তা বা প্রশাসনের তরফে সে বিষয়ে যেমন জোরদার কোনও প্রচার নেই বলে অভিযোগ উঠছে। আবার তেমনই এক শ্রেণির মানুষ পুজোর সাজ নষ্ট না করার অভিপ্রায়ে মাস্ককে দূরে সরিয়ে রাখছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘উৎসব হোক সচেতনতার। তা যেন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় না হয়। তা হলে আগামী দিনে পুজোর আনন্দের জায়গায়
করোনা আক্রান্তের বিষণ্ণতা নেমে আসতে পারে।’’
কিন্তু এই সতর্কবার্তা ক’জন শুনছেন, সেই প্রশ্নই এখন সব থেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় মেট্রোতেও উপচে পড়েছে ভিড়। সেখানেও নিমেষে উধাও হয়েছে করোনা বিধি। বহু যাত্রীকে আবার ভিড়ের মধ্যেও মাস্কহীন দেখা গিয়েছে।
এ দিনও স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে দেখা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৭৬০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।