ছবি: পিটিআই।
আর একটা রাত কাটলেই দুঃস্বপ্নের বছর শেষ। কিন্তু দুর্ভোগের শেষ দেখা যাচ্ছে কি? নতুন বছরেও কতটা সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে দুঃসহ করোনাকে? এ-সব প্রশ্নই ঘুরছে বর্ষশেষের প্রহরে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রাত্যহিক বুলেটিন দেখলে বলা চলে, করোনার রেখচিত্র অনেকটা নিম্নমুখী। তা হলে কি উদ্বেগ কমছে? ‘‘সেটা বলার সময় বোধ হয় আসেনি। আর নিম্নমুখী রেখচিত্র দেখে আত্মসন্তুষ্টিতে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসের ফল মারাত্মকও হতে পারে,’’ বলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এখন কয়েকটা মাস দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়াই উচিত।
প্রথম থেকেই করোনা সংক্রমণের তালিকায় উপরের দিকে থাকা কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, দার্জিলিঙে চোখ রাখলে দেখা যাবে, শেষ দু’মাসে দৈনিক ‘অ্যাক্টিভ পজ়িটিভ’ রোগীর সংখ্যা কমছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান, ১ নভেম্বর কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৯৭১। ২৮ ডিসেম্বর সেটা ৩০৩৪। উত্তর ২৪ পরগনায় ১ নভেম্বর আক্রান্ত ৬৬৮৯ জন, ২৮ ডিসেম্বর সেটা ২১৮৪। বাকি জেলাগুলিতেও আক্রান্তের হার নীচের দিকে। তবে রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের পরামর্শদাতা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী মনে করেন, এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবে না। ‘‘বিষয়টি ক্ষণস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী, তা স্পষ্ট নয়। দেশে করোনার হার নিম্নমুখী ঠিকই। তা বলে এখনই আনন্দে রাস্তায় নেমে নাচানাচি করলে ভবিষ্যতে যে আবার নতজানু হয়ে পড়তে হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই,’’ হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন অভিজিৎবাবু।
আরও পড়ুন: বঙ্গেও নতুন স্ট্রেন, উদ্বেগ
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত বেড়ে ২০, তালিকায় ব্রিটেনফেরত ২ বছরের শিশুও
চিকিৎসকদের মতে, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলায় এখনও উদ্বেগ রয়েছে। কোভিড পরীক্ষা যথেষ্ট না-হওয়াই তার মূল কারণ। তাই সরকার ও নাগরিক উভয় পক্ষেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘করোনার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে একটাই পথ রয়েছে। তা হল পরীক্ষা বাড়ানো। কত লোক সংক্রমিত হয়ে রয়েছেন, তা বোঝা না-গেলে কিছুই হবে না।’’ তিনি জানান, এখন বেশির ভাগই মানুষই উপসর্গহীন বা যৎসামান্য উপসর্গযুক্ত। আইসোলেশন, কোয়রান্টিন, কন্টেনমেন্ট জ়োন উঠে যাওয়ায় তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা পরীক্ষাও করাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা সংক্রমিত নন, এটা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। ‘‘সংক্রমিতের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, সেটাও এখন আর দেখা হচ্ছে না। এটা খুবই জরুরি ছিল,’’ বলেন মানসবাবু।
মাস্ক না-পরা, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা, দূরত্ব বিধি না-মানার মতো করোনায় কিছু হবে না কিংবা হলেও সেরে যাবে— এমন একটা নিশ্চিন্তির ভাব এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুই বলেন, ‘‘দৈনন্দিন আক্রান্তের সংখ্যা বা মৃত্যুহার কমে যাওয়া আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, করোনা পরীক্ষা করাতে হবে বলার পরেও অনেকে তা করাচ্ছেন না। রোগের কামড় জোরদার হয়ে যাওয়ার পরে যখন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে, কোভিড পজ়িটিভ। মানুষকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতায় জোর দিতে হবে সরকারকেও।’’
গত কয়েক দিনে হাসপাতালে করোনা রোগীর ভিড় কম হওয়ায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেও পরিসংখ্যান নিয়ে তাঁরা খুব আশাবাদী নন বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। ‘‘সংক্রমিত কমলেও আনুপাতিক মৃত্যুহার এখনও চিন্তার বিষয়। রাজ্যে মৃত্যুহার দুই শতাংশের বেশি। এখনও টেস্ট পজ়িটিভিটি রেট সাড়ে তিন শতাংশ। আসলে দৈনিক পরীক্ষা কতটা হচ্ছে, পুরোটা তার উপরেই নির্ভর করছে। টিকা প্রয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার আগে নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই,’’ সতর্ক করে দিচ্ছেন কুণালবাবু।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)