গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
করোনা উপসর্গ নেই। অন্য অসুখের চিকিৎসার জন্য নন-কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগী। সেই রোগীরই সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম বা হাসপাতালে করোনা ধরা পড়লে অনভিপ্রেত ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন আক্রান্তের পরিজনেরা। অভিযোগ, সরকারি বা বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে শয্যা নিশ্চিত না করেই আক্রান্তকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য রোগীর পরিজনদের উপরে চাপ দিচ্ছেন এ ধরনের নার্সিংহোম-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার প্রেক্ষিতে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য দফতর।
শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৯১২ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। মৃত্যুর হার কমানোর প্রশ্নে রেফার-সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হুঁশিয়ারি জারির পাশাপাশি এ দিন ক্রিটিক্যাল কেয়ারে গুরুতর চিকিৎসাধীন রোগীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
রেফার-সংক্রমণ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এর আগে প্রতিটি হাসপাতালকেই করোনা সন্দেহভাজনদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খুলতে বলা হয়েছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের নজরে এসেছে, সরকারি বা বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে শয্যা নিশ্চিত না করেই নন করোনা নার্সিংহোম বা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন আক্রান্তকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এক দিনে রোগী বাড়ল ৬২ হাজার, কটাক্ষে রাহুল
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এর ফলে করোনা আক্রান্ত যে রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত তাঁকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের! স্বাস্থ্য ভবন এ দিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এ ধরনের রোগীকে শয্যা নিশ্চিত না করে রেফার করা যাবে না। নির্দেশের অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোভিড হাসপাতালগুলিতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে সঙ্কটজনক রোগীদের দেখার জন্য দুই সদস্যের পৃথক তিনটি দলও গড়া হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (সিপিএমএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোন হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কতজন সঙ্কটজনক রোগী রয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা চিকিৎসক দলের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রতিটি চিকিৎসক দলকে একটি ট্যাব দেওয়া হবে। তালিকা অনুযায়ী রোগীদের দেখে নিজেদের পর্যবেক্ষণ ট্যাবের মাধ্যমে সিপিএমএসে নথিভুক্ত করবেন চিকিৎসকদের পরিদর্শক দল।
পর্যবেক্ষণের নিরিখে দ্রুত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সিসিইউ, আইসিইউ, এইচডিইউয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের রক্তচাপ, দেহে অক্সিজেনের মাত্রা-সহ ভাইটাল প্যারামিটারস দিনে চারবার নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)