Coronavirus in West Bengal

‘রিজার্ভ বেঞ্চ নেই! রোগী কে দেখবেন?’

ডাক্তারের পাশাপাশি আর একটি সমস্যাও তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তা হল নন-কোভিড রোগীদের হাসপাতালে শয্যা পাওয়া।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩১
Share:

ছবি পিটিআই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি হাজার জনসংখ্যায় যত জন চিকিৎসক, নার্স থাকার কথা, সাধারণ সময়েই তা কম থাকে। করোনা-পরিস্থিতিতে ‘এক্সপোজ়ড’ হওয়ার জন্য ধারাবাহিক ভাবে চিকিৎসক-নার্সের একাংশকে কোয়রান্টিনে যেতে হচ্ছে। একই ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক-একটা গোটা হাসপাতাল বা হাসপাতালের বিভাগ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে বড় ধরনের চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রশাসকদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

সমস্যা তৈরি হচ্ছে নন-কোভিড রোগীদের হাসপাতালে শয্যা পাওয়া নিয়েও। লকডাউনের সময়েই যদি এমন হয়, তা হলে লকডাউন উঠে গেলে হাসপাতালের আউটডোর ও অন্য বিভাগে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে আতঙ্কিত সকলেই। তবে স্বাস্থ্যকর্তারা কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি হাজার জনসংখ্যায় এক জন চিকিৎসক থাকার কথা। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, রাজ্যের জনসংখ্যা হল ৯ কোটি ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ১১৫। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কাউন্সিলে নথিভুক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮) ৭২ হাজার ১০৬। সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, নথিভুক্ত চিকিৎসক সংখ্যার ৮০ শতাংশ কর্মরত থাকেন। সেই হিসেবে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬৮৪ জন। অর্থাৎ, চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত হল ১:১৫৮২। আবার হু-র নিয়ম অনুযায়ী নার্স ও জনসংখ্যার অনুপাত হওয়ার কথা ৩:১০০০। সেখানে মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে সব বিভাগ মিলিয়ে নার্সের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭৮২ জন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কর্মরত হলে নার্স ও জনসংখ্যার অনুপাত হয় ১:৮১৬। ফলে সাধারণ সময়েই দু’টি ক্ষেত্রে নির্ধারিত মাপকাঠির তুলনায় পিছিয়ে রাজ্য।

Advertisement

আরও পড়ুন: সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্তার মৃত্যু রাজ্যে, এই মুহূর্তে আক্রান্ত ৪৬১

‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক ধর চৌধুরীর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অনেক চিকিৎসক, নার্সকেই কোয়রান্টিনে যেতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। না-হলে অচিরেই পরিস্থিতি জটিল হবে।’’ সরকারি হাসপাতালের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, করোনা-বিধি মেনে হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স সংখ্যা কম। সেই লোকবল থেকেও কয়েক জন কোয়রান্টিনে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চাপ তৈরি হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘এখানে কোনও রিজার্ভ বেঞ্চ নেই, যেখান থেকে বিকল্প চিকিৎসক-নার্সদের এনে সামাল দেওয়া সম্ভব! রোগী কে দেখবেন?’’ আর এক হাসপাতাল-কর্তার কথায়, ‘‘ধরে নেওয়া যাক, কোনও চিকিৎসক-নার্সেরই করোনা হল না। কিন্তু তাঁদের ন্যূনতম যে ১৪ দিন কোয়রান্টিনে যেতে হচ্ছে, সেই সময়ে হাসপাতালে রোগী আসবেন না, তা তো নয়!’’ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘লকডাউনে রোগীরা কম আসায় পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে। লক ডাউন উঠলে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সমস্যা হবে। তবে পরিষেবায় কোনও ঘাটতি হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন: হাওড়ার চার থানা এলাকায় চালু হচ্ছে সম্পূর্ণ লকডাউন

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনিমা হালদারের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা নিরাপত্তা নেননি, তাঁরাই শুধু কোয়রান্টিনে গিয়েছেন। আমাদের সকলেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন। অসুবিধা হচ্ছে না।’’ করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘সারা দেশেই এই সমস্যা। তবে রাজ্য সরকার এই সমস্যা কাটাতে সক্রিয়।’’

ডাক্তারের পাশাপাশি আর একটি সমস্যাও তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তা হল নন-কোভিড রোগীদের হাসপাতালে শয্যা পাওয়া। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, গ্রাম-শহর মিলিয়ে রাজ্যে সরকারি হাসপাতালের মোট শয্যাসংখ্যা ৭৮ হাজার ৫৬৬। কলকাতায় সরকারি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ১০ হাজার ৫৫৫। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা হল ৩৪ হাজার ৯৬৯। ফলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট শয্যা-সংখ্যা ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৩৫। যা সারা দেশের মোট শয্যা সংখ্যার ৫.৯ %।

সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আর্থিক কারণে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা মূলত সরকারি হাসপাতালকেন্দ্রিক। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা আর কত জন নিতে পারেন? অনেক জায়গায় করোনা-সংক্রমণের কারণে একাধিক বিভাগই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে রোগীও ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।’’

আবার চলতি মাসেই নির্দেশিকা জারি করে সরকারি-বেসরকারি-সহ ৬৬টি হাসপাতালকে কোভিড-১৯-এর জন্য নির্দিষ্ট করেছে রাজ্য সরকার। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অনেক বিভাগই আস্তে-আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিষেবার উপরে চাপ তৈরির পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের বেড পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। যেমন ক্যানসারের মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রেই শুধু জরুরি ভিত্তি ছাড়া কোনও চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। কিন্তু এ ভাবে কত দিন টানা সম্ভব?’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স’ ফোরাম’-এর সেক্রেটারি কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এটা স্পষ্ট করে বলুক, কোভিড রোগীরা চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতালে যাবেন, আর নন-কোভিড রোগীরা কোথায় যাবেন। না হলে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যে হারে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়রান্টিনে যাচ্ছেন, সেটা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এমন অবস্থা হবে যে, হাসপাতাল, বেড, ভেন্টিলেশন-সহ পুরো পরিকাঠামোই থাকবে, কিন্তু চিকিৎসার লোক পাওয়া যাবে না!’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement