প্রতীকী চিত্র।
কর্তব্যে সাড়া দিয়ে রোগী পরিষেবায় ব্রতী ছিলেন তাঁরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটছে সেই সব চিকিৎসকের পরিজনদের।
এপ্রিলে এ রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। এরপর এ পর্যন্ত অন্তত আটত্রিশ জন চিকিৎসকের করোনায় মৃত্যু হয়েছে।
শ্যামনগরের জনপ্রিয় চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যও (৫৭) গত ১০ অগস্ট কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। স্ত্রী ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু রোগীর প্রতি দায়িত্ব এড়াতে চাননি।’’ ঘটনা হল, সেই পরিবারই মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পরেও ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ হাতে পাননি। মৃতের আত্মীয় কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু হওয়ায় আয়ের সংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু মৃত্যুর শংসাপত্র না মেলায় প্রয়াত চিকিৎসকের সঞ্চিত পুঁজি ভেঙে তা করতে পারছেন না স্ত্রী।
আরও পড়ুন: কাজ গিয়েছে করোনায়, মাথায় হাত ডেকরেটরদের
একই ভাবে দুই তরুণ চিকিৎসকের পরিবারকে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কোভিড। স্থায়ী আয় ছাড়া দু’বছরের ছেলেকে কী ভাবে বড় করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না আর এন টেগোরে কর্মরত নবীন চিকিৎসক নীতীশ কুমারের (৩৬) স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা। গত ৪ অগস্ট স্বামীর মৃত্যুর পরে বেশ কয়েকদিন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না স্ত্রী। দু’বছরের সন্তানকে নিয়ে এখন পুনেতে দিদির বাড়িতে রয়েছেন। এদিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘একটা চাকরি খুব জরুরি। নইলে এত ছোট ছেলেকে নিয়ে লড়ব কী ভাবে!’’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুরেন্দ্রনাথ বেরার (৩৫) স্ত্রী স্বাতী ভৌমিকও সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তাঁর এক ছেলের বয়স পাঁচ বছর। ছোট ছেলের সবে দু’মাস হয়েছে। মৃতের পারিবারিক বন্ধু চিকিৎসক কৌশিক পাল জানান, স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে যে ১০ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা তা এখনও পরিজনেরা হাতে পাননি। সরকারি আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি একটি স্থায়ী চাকরিও জরুরি।
যার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক সংগঠনগুলির অভিযোগ, কোভিড পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি উদাসীনতা পরিবারগুলিকে এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সে’র সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘গোড়ার দিকে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হলে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষস্তর থেকে টুইট করে সমবেদনা প্রকাশ করা হত। এখন তো সে সবও উঠে গিয়েছে।’’
আইএমএ’র সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন প্রসঙ্গটি কেন্দ্রের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি দু’ক্ষেত্রেই করোনায় মৃত চিকিৎসকদের আর্থিক সাহায্য পাওয়া উচিত। সে জন্য তাঁদের শহিদের মর্দাদা দেওয়ার কথা সংসদে বলেছি।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)