—ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে তাই বয়স্ক এবং আনুসঙ্গিক অসুস্থতা (কো-মর্বিডিটি) থাকা সংক্রমিতদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকা উচিত। সেই সঙ্গে রাজ্যে করোনার সংক্রমণ চিহ্নিত করতে সব ধরনের অনুমোদিত পরীক্ষা আরও বেশি করে করা উচিত। বুধবার করোনা সংক্রমণ নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের তরফে জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে। করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে ঘরোয়া ভাবে পরামর্শ নেওয়ার জন্য সরকার গঠিত বোর্ডের আহ্বায়ক চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বিবৃতিটি এ দিন জারি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১৩ বার বৈঠকে বসেছে বোর্ড। বেশ কয়েকটি বৈঠকে মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্যসচিবও উপস্থিত থেকেছেন। বোর্ড করোনার চিকিৎসা, নমুনা পরীক্ষা, মাস্কের ব্যবহার, চিকিৎসা প্রোটোকল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়ার প্রসঙ্গে বেশ কিছু পরামর্শ সরকারকে দিয়েছিল। সরকার তা মেনেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে তা বোর্ডকে জানিয়েছেন। ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল বুরো অব ইকনমিক রিসার্চ’-এর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে অভিজিৎ বিনায়ক ও তাঁর সহ-গবেষকেরা দাবি করেছেন, জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের দিয়ে প্রচার করালে তা বেশি কার্যকর হবে। বস্তুত, নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়কের ভিডিয়ো-বার্তা দিয়েও প্রচার করানো হয়েছে রাজ্যে এবং তাতে ভাল ফল মিলেছে।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলা এই বোর্ড মনে করে, করোনার সংক্রমণ দেশের অন্য প্রান্তের মতো এ রাজ্যেও বাড়ছে এবং আরও বাড়বে। সার্বিক লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সংক্রমণের হার আরও বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লকডাউন কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তাই এখন সংক্রমণ ঠেকাতে আরও সচেতন ভাবে মাস্ক পরতে হবে, পারস্পরিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে হবে, ভিড় বিশেষ করে বদ্ধ এলাকায় (ইনডোর) এড়িয়ে চলতে হবে। সরকার যাতে উন্নত মানের মাস্ক কিনে রাজ্যবাসীর মধ্যে বিলি করে সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচার আরও বাড়াতে বলে বোর্ড।
বোর্ড মনে করে, সংক্রমণের মাত্রা এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে সরকার স্থানীয় এলাকাভিত্তিক কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত করা উচিৎ। কন্টেনমেন্ট জ়োনে কঠোর ভাবে লকডাউন প্রয়োগ করে সব ধরনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। লকডাউনের ফলে সমাজের একাংশের জীবন-জীবিকার সমস্যা হচ্ছে। সরকারের উচিত, তাঁদের চিহ্নিত করে কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া।
অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বয়স্ক এবং আনুসঙ্গিক অসুস্থতা রয়েছে এমন মানুষের সর্বাধিক। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভর্তি করতে হবে। হাসপাতালকে কো-মর্বিডিটির চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে হবে। পাশাপাশি অক্সিজেনের সরবরাহ এবং অনুমোদিত ওষুধের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। বোর্ডের মতে, রাজ্য সরকার এমন
রোগীদের সংখ্যা যে বাড়তে চলেছে তাঁর আঁচ করে পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তাই সরকারকেও দ্রুত তার উপর নজর রেখে পরিকাঠামো বাড়াতে হবে, করণীয় ঠিক করতে হবে।
বোর্ডের মতে, বাড়তি ঝুঁকির রোগীদের যেমন হাসপাতালে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তেমনই উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের রোগীরা যাতে হাসপাতালের শয্যা ভর্তি করে না-দেন, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এমন রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই নিজেদের আলাদা করে রাখুন। যদি বাড়িতে একান্তই জায়গা না থাকে, তা হলে তাঁদের কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্য সরকার সেই কারণে সেফ হোম তৈরি করেছে।
বোর্ড বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে করোনা সংক্রমণের খবর শুনলেই পাড়া-প্রতিবেশীদের একাংশ অচ্ছুৎ করে দিচ্ছেন। সেই কারণে অনেকে রোগ লুকিয়ে থাকছেন। যা বিপদ আরও বাড়াচ্ছে। ফলে অসুস্থ হলে কাউকে একঘরে না করে বরং সহযোগিতা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোভিড উইনার্স নেটওয়ার্কের মতো সংস্থার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।