প্রতীকী ছবি।
পুজোর ভিড়ে রাশ টানা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাঙালির চায়ের পেয়ালায় তুফান উঠে চলেছে। সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যেও একদল উৎসব-উন্মাদনার স্রোতে ভেসে যেতে প্রস্তুত। তাঁদের যুক্তি, পুজো তো বছরে একবার! প্যান্ডেলে ঢাকের আওয়াজ, ধুনুচি নাচ, অষ্টমীর ভোগের সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সেই যুক্তির পাল্টা হিসাবে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের মঞ্চ থেকে বুধবার মোক্ষম জবাব দিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে কাজ সম্ভব হলে প্রার্থনা কেন নয়!’’ আর রাজ্যের গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের সদস্য স্বরূপ সরকারের বক্তব্য, উৎসব উন্মাদনায় গা ভাসানোর অর্থ পরোক্ষে সংক্রমণ ছড়ানোর দায় নেওয়া!
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, চব্বিশ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০৬৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। মাত্র চারদিন আগেও কলকাতায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আটশোর নীচে (৭৮৪)। পুজো পরিক্রমার ঢাকে কাঠি পড়তে তা মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল আটশোর কিছু বেশি। এদিন সেই পরিসংখ্যান একলাফে নশোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭৯! উত্তর ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ৮৭২। দুই জেলাতেই চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা হল ১৯। সংক্রমণের মাপকাঠিতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে হাওড়া (২৬৮), হুগলি (২২৩), পশ্চিম মেদিনীপুর (২২৫), হুগলি (২২৩) এবং নদিয়া (১৮০)।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানান, উৎসবের আমেজে যখনই জমায়েত প্রশ্রয় পেয়েছে তখনই কোভিডের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। ইউরোপ-সহ সারা বিশ্বে এই উদাহরণ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড়ের সঙ্গে সংক্রমণও সফর করে। সে জন্য রাজনৈতিক সভা, উৎসবের জমায়েত সুপার স্প্রেডিং অনুষ্ঠানের রূপ নিতে পারে।’’ একই সঙ্গে সংক্রমণের পায়ে বেড়ি পরাতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। ঘটনাচক্রে, রাজ্যে প্রতিদিনের সংক্রমণের সংখ্যা চার হাজারে গন্ডি অতিক্রম করলেও প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৪৩ হাজারের ঘরেই আটকে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ও পুজোর ‘সন্ধিক্ষণে’ রাজ্য
আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজার পেরোল, মৃত ৬৪
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের সদস্য স্বরূপ সরকার জানান, পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফেরার পরেও অগস্ট পর্যন্ত মূলত পাঁচটি জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে সেই তালিকায় আরও পাঁচটি জেলা যুক্ত হয়েছে। তবুও রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ জেলায় এখনও সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি করোনা ভাইরাস। কিন্তু উৎসবের ভিড়ে রাশ না টানলে সেই বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘হার্ড ইমিউনিটি কতদিনে অর্জন করা যাবে জানি না? প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পরে দেহে তৈরি অ্যান্টিবডির মেয়াদ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। করোনা আরও অন্তত দু’বছর থাকবে। এখন ধৈর্য্য ধরার সময়।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)