প্রতীকী ছবি।
এলগিন রোডে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতাকে কোনও রাখঢাক না রেখেই মাঝবয়সি ব্যক্তি কথাটা বলে ফেললেন, ‘বাড়িতে পাঁচ জন বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। কত টাকা দিতে হবে বলুন!’’ বিক্রেতা জানালেন, এ ভাবে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করা যায় না। কে শোনে কার কথা! সাধারণ মানুষ থেকে ‘ক্যাচ’ ক্রেতা— সকলেই ঘুরপথে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করতে চাইছেন। মেডিক্যাল অক্সিজেন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত সংস্থা, ডিলারদের একাংশের বক্তব্য, এই প্রবণতায় রাশ না টানলে আগামিদিনে জোগানে সমস্যা হতে পারে।
বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে সংক্রমণের গোড়ায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নিয়ে যে ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছিল জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেই প্রবণতা মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। সেই প্রবণতার মাত্রা বোঝাতে এক অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী বিক্রেতা জানান, সম্প্রতি কাঁকুড়গাছি এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসের এক আধিকারিক কোভিডে আক্রান্ত হন। এর পর ওই অফিসের বাকি কর্মীদের মধ্যে সিলিন্ডার মজুত করার প্রবণতা বেড়েছে। রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একাংশও অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য কলকাতার বিক্রেতাদের কাছে প্রায়শই আবদার করছেন বলে খবর। তাঁরাই হলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতাদের পরিভাষায় ‘ক্যাচ ক্রেতা’! বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ১০.২ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডারের। এ ধরনের সিলিন্ডারে ১.৫৩ কিউবিক মিটার মেডিক্যাল অক্সিজেন থাকে।
কোভিড পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারি না হয় সে জন্য গত শুক্রবার একটি নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। বলা হয়েছে লাইসেন্স ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করা যাবে না। এর অন্যথা হলে গ্যাস সিলিন্ডার আইনের (২০১৬) ৪৩ এবং ৪৪ (বি) নম্বর ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। এরপরও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি বলে জানাচ্ছেন বঙ্গের অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতারা।
রাজ্যের এক অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার সুখেন্দু সামন্ত বলেন, ‘‘আগের তুলনায় রিফিলিংয়ের মাত্রা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এ রাজ্যে লিক্যুইড অক্সিজেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের উৎপাদনে কোনও সঙ্কট নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিলিন্ডার কিনলে চলবে কী করে!’’
এ রাজ্যের আরেকটি বৃহৎ অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার পদম আগরওয়ালের পর্যবেক্ষণ অবশ্য ভিন্ন। মেডিক্যাল অক্সিজেনের যে অভাব নেই তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পরিজনদের কথা ভেবে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। এই প্রবণতা রোধ করা মুশকিল। তার চেয়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান মডেলে অক্সিজেনের আরও আউটলেট খোলার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।’’
এক অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় বিপণন কর্তা শুভেন্দু সিংহ জানান, সারা দেশে মূলত দু’টি প্রস্তুতকারক সংস্থা মিলিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার সিলিন্ডার তৈরি করে। তাঁর কথায়, ‘‘১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে এক শতাংশ মানুষকেও যদি সিলিন্ডার দিতে হলে ১ কোটি ৩০ লক্ষ সিলিন্ডারের প্রয়োজন। সে জন্যই প্রয়োজন না থাকলে কারও অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা উচিত নয়। তাতে যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা পাবেন না।’’ সংস্থার পদস্থ কর্তা জানান, পূর্বাঞ্চলে একসময় প্রতি মাসে দেড়-দু’হাজার সিলিন্ডারের প্রয়োজন পড়ত। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা এখন তিনগুণ হয়ে গিয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)