Coronavirus in West Bengal

ঠিক ছবির জন্য বেশি পরীক্ষা চাইছেন ডাক্তারেরা

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন আরও ২০ জন করোনা পরীক্ষা করাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৬:১৫
Share:

করোনা পরীক্ষা। ফাইল চিত্র

দেশ ও রাজ্যের নিরিখে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ও হার জানানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সেই পরিসংখ্যান কতটা ঠিক, তা নিয়ে স্বাস্থ্য শিবির থেকে আমজনতা, সর্বস্তরেই সংশয়-সন্দেহ প্রবল। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গোটা দেশে পরিস্থিতি এখন এতটাই বেসামাল যে, সংক্রমণের পরিসংখ্যান কিছুটা হলেও ‘কাল্পনিক’ থেকে যাচ্ছে। প্রাত্যহিক পরীক্ষা আরও অনেক বেশি বাড়ালে যথাযথ চিত্র মিলতে পারে বলে তাঁদের অভিমত।

Advertisement

দৈনিক আক্রান্তের ঠিক সংখ্যা নিয়ে সংশয় কেন? এক চিকিৎসকের ব্যাখ্যা: ধরা যাক, সোমবার রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত ১০০ জন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন আরও ২০ জন করোনা পরীক্ষা করাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন। আরও ৪০ জন আছেন পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায়। এবং অন্তত ২০ জন ‘কিছু হয়নি’ মানসিকতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনুমান করা যেতে পারে, ওই ৮০ জনের মধ্যে অন্তত ৪০ জন করোনা পজ়িটিভ। কিন্তু সোমবার তা জানা গেল না। যদি যেত, তা হলে ওই দিন আক্রান্তের সংখ্যা হত ১৪০।

গত বছর ২২ অক্টোবর আক্রান্ত হন ৪১৫৭ জন। সে-দিনের কোভিড পরীক্ষার নিরিখে টেস্ট পজ়িটিভিটি রেট (টিপিআর) ছিল ৯.৪০ শতাংশ। তখনও পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্তের ওই সংখ্যাটাই ছিল পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক। তার পরে করোনার প্রথম ঝড় ধীরে ধীরে শান্ত হওয়ায় দৈনিক সংক্রমণ ১০০-র ঘরে নেমে এসেছিল। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় ঝড়ে সংক্রমণের সর্বাধিক সংখ্যা কত হবে?

Advertisement

এক চিকিৎসক বলেন, “লাখ টাকার প্রশ্নই বটে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দৈনিক পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা করাতে গিয়ে মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতেই লাগছে ৫-৭ দিন। আবার পরীক্ষার জন্য ২-৩ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের মতে, দেশের সর্বত্রই এখন ‘টিপিআর’ ৩০ শতাংশের উপরে ঘোরাফেরা করছে। এর অর্থ, সংক্রমণ মারাত্মক বেশি এবং পরীক্ষা হচ্ছে অত্যন্ত কম। যাঁরা ভীষণ অসুস্থ, তাঁরা ছাড়া অন্যেরা, মৃদু উপসর্গযুক্ত বা উপসর্গহীনেরা কেউ সে-ভাবে পরীক্ষাই করাচ্ছেন না। কুণালবাবু বলেন, ‘‘আমরা যে যথেষ্ট পরীক্ষা করছি না এবং তার ফলে যে দৈনিক আক্রান্তের ঠিক সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না, টিপিআর দেখেই সেটা মালুম হচ্ছে। সব রাজ্যেই আরটিপিসিআর ছাড়াও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন, সিবি-নাটের মতো যে-সব চটজলদি পরীক্ষা আছে, সেগুলিরও সংখ্যা বাঁধা। তার জেরেও পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সব কিছুরই তো একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। এখানে ২৪ ঘণ্টা আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিগুলি কাজ করেও সামাল দিতে পারছে না। আগে বেসরকারি হাসপাতালগুলির র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার অনুমতি ছিল না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এখন ওই পরীক্ষা করারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।" স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, এখন প্রতিদিন ৬০-৭০ হাজার কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে ৮-১২ হাজার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন। গত ২২ অক্টোবর, রাজ্যে সর্বাধিক সংক্রমণের দিন পরীক্ষা
করা হয়েছিল ৪৪,২৫২ জনের। তার মধ্যে প্রায় ৭০০০ ছিল র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন।

স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এক শ্রেণির মানুষের যেমন করোনা বিধি মানতে অনীহা রয়েছে, তেমনই করোনা পরীক্ষাতেও গড়িমসি করছেন অনেকে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘এখন সংক্রমণের যা ঊর্ধ্বগতি এবং পরীক্ষা প্রক্রিয়াতেও যে-পরিমাণ চাপ পড়ছে, তাতে বহু মানুষ উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা না-করিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা নিজের বিপদ ডেকে আনার পাশাপাশি বাড়ির অন্যদের মধ্যেও রোগটা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেকে আলাদা রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এখন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেনেরও গুরুত্ব অপরিসীম। দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে পারলে সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement