ছবি এএফপি।
বেশ কিছু রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট মাঝেমধ্যেই এমন বদলে যাচ্ছে যে, খুবই সতর্ক থাকতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এই বদলের ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন তাঁরা। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে যেমন কিছু দিন আগে হলদিয়ার এক প্রৌঢ়ের কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ এল। বেশ কয়েক দিন চিকিৎসার পর তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ এল। তাঁর শারীরিক অবস্থা ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় দিন কয়েক পরে ফের পরীক্ষা করা হল। তখন আবার রিপোর্ট পজ়িটিভ। ওই হাসপাতালেই আর এক প্রৌঢ় রোগীর কোভিড রিপোর্ট আগে দু-দু’টি সরকারি হাসপাতালে নেগেটিভ এল। এই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আবার পরীক্ষার পরে রিপোর্ট এল পজ়িটিভ।
বাইপাসে এক বেসরকারি হাসপাতালে অন্তত ৪-৫ জন রোগীর আগে কোভিড টেস্টের একাধিক রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, পরে রিপোর্টে কোভিড পজ়িটিভ মিলেছে। সল্টলেকেই আর এক বেসরকারি হাসপাতালে তিন জন রোগীর কোভিড রিপোর্ট প্রথমে পজ়িটিভ, তার পরে নেগেটিভ, তার পরে ফের পজ়িটিভ এসেছে। উদাহরণ রয়েছে এমন অনেক।
এই ধরনের ‘ফলস নেগেটিভ’ বা ‘ফলস পজ়িটিভ’ রিপোর্টের পিছনে বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন মত, ‘প্রি টেস্ট প্রোবাবিলিটি’-র সঙ্গে র্যাপিড পলিমার চেন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) টেস্ট করলে তবে সঠিক ফল আসার সম্ভাবনা। ‘প্রি টেস্ট প্রোবাবিলিটি’ অর্থাৎ, রোগীর শারীরিক উপসর্গ, রেডিয়োলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট, রক্তে লিম্ফোপেনিয়ার সংখ্যা এই সব কিছুর সঙ্গে আরটি-পিসিআরকে মেলাতে হবে। তা না-হলে রিপোর্ট ভুল আসতে পারে। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কারও দেহে কোভিডের মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৪-৫ দিনের মাথায় লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা উচিত। আমরা তাই করছি। নমুনা সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা, তা ঠিকঠাক কোল্ড চেন রক্ষা করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া ও চার ঘণ্টার মধ্যে ল্যাবে পরীক্ষা করাটাও জরুরি।’’
আরও পড়ুন: কোয়রান্টিন কেন্দ্রে না-গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কোভিড আক্রান্তদের বাড়িতে থাকা কতটা নিরাপদ?
চিকিৎসক শুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লালারস বা গলা থেকে রস নমুনা হিসাবে সংগ্রহের পাশাপাশি নাকের থেকেও সোয়াব নেওয়া উচিত। তাতে রিপোর্ট ভাল মেলে। কোভিডের মতো উপসর্গ থাকলেও রিপোর্ট যদি নেগেটিভ আসে তা হলে রোগীকে কিছু দিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে নজরদারিতে রেখে একাধিক বার তাঁর নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। তার পর নিশ্চিত হতে বুকের সিটি স্ক্যান করতে হবে। তাতেও নেগেটিভ এলে তবে বলা যাবে রিপোর্ট নেগেটিভ।’’
আরও পড়ুন: গ্রিন জোনে কতটা ছাড়, হিসেব কষা শুরু রাজ্যের
এসএসকেএমের চিকিৎসক রাজা রায়ের কথায়, রোগীর শরীরে ভাইরাল লোড সব সময় এক থাকে না। যখন খুব কম থাকে তখন টেস্ট করলে অনেক সময় ‘ফলস নেগেটিভ’ বের হচ্ছে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুগত দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির ‘ন্যাজাল সোয়াব’ বা নাকের ভিতরের জলের নমুনা নিচ্ছেন ও গুরুতর অসুস্থ ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীর শ্বাসনালির ভিতর থেকে রস সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠাচ্ছেন। গত ১১ মার্চ জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। চিনের দু’টি প্রদেশের ৩টি হাসপাতালের ২০৫ জন রোগীর উপর করা ওই সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, শ্বাসনালির ভিতর থেকে সংগ্রহ করা রসে কোভিড পজ়িটিভিটি ৯৩%। নমুনা হিসেবে কফের পজ়িটিভিটির হার ৭২%। নাকের জলের নমুনা থেকে কোভিড ভাইরাস পাওয়ার হার ৬৩%। লালারসে ভাইরাস পাওয়ার হার ৩২%।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)