প্রতীকী ছবি।
অতিমারির করাল ছায়ার মধ্যে এত দিন যৎকিঞ্চিৎ স্বস্তি ছিল গ্রাম-মফস্সল। সেখানে মনুষ্যবসতি তুলনায় দূরে দূরে, করোনার থাবাও কিছুটা কমজোরি। কিন্তু বৃহস্পতিবার করোনার 'হাইজ্যাম্প'-এ কলকাতাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে জেলা! এটা অগ্রগতি নয়, পশ্চাদ্গতি। এবং এটা বৃহত্তর বিপদের অশনি-সঙ্কেত বলেই স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের ধারণা।
দৈনিক সংক্রমণে উত্তর ২৪ পরগনা এ দিন কলকাতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯১২ জন। কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যাও কম কিছু নয়— ৩৯০১। এ দিন রাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭,৪০৩ জন। এ দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৯ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা ২৩ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ২১ জন।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুর হার এখনও কম রয়েছে। কিন্তু তাতে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কেননা, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সঙ্কটজনক রোগী তো বাড়বেই। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকবে মৃতের সংখ্যাও। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কী ভাবে প্রাণহানি কমানো যায় এবং কী ভাবে লাগাম দেওয়া যায় মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বগতিতে, তারা সব সময়েই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে জোর দিতে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, "এর থেকে পরিস্থিতি যাতে আর খারাপ না-হয়, স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান লক্ষ্য সেটাই। সেই অনুযায়ী চেষ্টা চালানো হচ্ছে।"
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে, কোমর্বিডিটি থাকলে মৃত্যুহার যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির লোক রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করে ফেলছেন। এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, "যদি ঠিক সময়ে ঠিক ওষুধ এবং অক্সিজেন দেওয়া যায়, তা হলে অনেক মৃত্যু আটকানো সম্ভব। অন্তত যাঁদের বয়স কম বা কোমর্বিডিটি কম, তাঁদের ক্ষেত্রে। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে, জ্বর হয়েছে বলে ফেলে রাখলে হবে না। চিকিৎসকেরা যে-প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন বা পরীক্ষা করাতে বলছেন, তা মেনে যথাযথ ভাবে চলতে হবে।"
কিন্তু সব সময় যে শয্যা মিলছে, তা-ও তো নয়। অনেক ক্ষেত্রেই শয্যা না-পাওয়ার অভিযোগ উঠছে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই। বরং মৃদু উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র কোনও চিকিৎসকের পরামর্শে যদি বাড়িতে থাকা যায়, প্রথম থেকেই যদি তাঁর কথা শুনে চলা যায়, তা হলে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। ওই চিকিৎসকেরা বলছেন, "যখন মানুষ রোগটাকে উপেক্ষা করে কিছু দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন, তখনই কিন্তু সমস্যা বাড়ছে।" রাজ্য সরকার অবশ্য প্রতিদিনই কোভিড শয্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব এক নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, কোভিড ওয়ার্ড বা শয্যা বাড়াতে হলে সদর দফতরের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্য ভবনকে বিষয়টি জানিয়ে শহরের মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরাই তা করতে পারবেন। আর জেলায় নতুন কোভিড হাসপাতাল, ওয়ার্ড, সেফ হোম চালু করতে হলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই তা করতে পারবেন। আগামী তিন মাস এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে। বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালও এ দিন কোভিড শয্যা বাড়িয়েছে।