বেলচা হাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
আট দিনের আবর্জনা স্তূপাকৃতি হয়ে রয়েছে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। কিন্তু সাফাইকর্মীরা পরিষ্কার করতে রাজি না-হওয়ায় হলদিয়ার কোয়রান্টিন সেন্টারের স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় উঠেছিল। উপযুক্ত রক্ষাকবচের আশ্বাস, কাউন্সেলিং করেও সাফাইকর্মীদের তাঁদের অবস্থান থেকে নড়ানো সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কোভিড নিয়ে অহেতুক ভয় ভাঙতে নিজেই সাফাইয়ের কাজে হাত লাগালেন হলদিয়া মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর বিশ্বাস! জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চোখে সেই আমলার মতো সরকারি আধিকারিকেরাই এখন ‘কোভিড হিরো’।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হলদিয়ার সতীশ সামন্ত ট্রেড সেন্টারে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। ওই কোয়রান্টিন সেন্টারের ‘ইনসিডেন্ট কম্যান্ডার’ হলেন কিশোরবাবু। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ কোয়রান্টিনে রয়েছেন। অনেকে ছাড়াও পেয়েছেন। সেই কেন্দ্রের অস্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা পজ়িটিভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এই আশঙ্কায় সাফাইকর্মীরা কাজ করতে চাইছিলেন না। তার ফলেই ময়লা স্তূপাকৃতি হয়ে জমে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। সাফাইকর্মীদের ভয় ভাঙতে প্রথমে তাঁদের কাউন্সেলিং করা হয়। উপযুক্ত রক্ষাকবচ পরে কাজ করলে ভয়ের যে কিছু নেই তা-ও বোঝানো হয়। কিন্তু মনের গভীরে প্রবেশ করেছে করোনা-ভীতির শঙ্কা এবং সেই শঙ্কা সহজে যাওয়ার নয়, তা বুঝতে পেরে এগিয়ে আসেন তরুণ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সেই মতো দ্রুত পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টস) পরে বেলচা হাতে তুলে নেন ওই ডব্লিউবিসিএস অফিসার। তাতে কাজও হয়। ‘স্যর’কে জঞ্জাল সাফাইয়ে হাত লাগাতে দেখে বেসরকারি সংস্থার সাফাইকর্মীরাও সক্রিয় হন। কিশোরবাবুর সঙ্গী ছিলেন মহকুমা শাসকের অফিসের দুই আধিকারিকও।
ফেসবুকে ইতিমধ্যে কিশোরবাবুর লড়াইয়ের কথা ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, মহকুমা শাসক অবনীত পুনিয়ার নেতৃত্বে রোগীদের খাবার দেওয়া, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো কাজে সামনে থেকে লড়াই করছেন তরুণ আধিকারিকেরা। বিভিন্ন জেলায় সহকর্মীরা যে ভাবে লড়াই করছেন তার জন্য গর্বও অনুভব করছেন তাঁরা। তবে বৃহস্পতিবারের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
বস্তুত, করোনার সঙ্গে যুদ্ধে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করার মতো এ ধরনের মানসিকতাই এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এই লড়াই হল আশার আলো। উনি যা করেছেন তা প্রশংসনীয়। আমাদের হাসপাতালেও জুনিয়রদের ভয় ভাঙাতে সিনিয়রেরা আগে করোনা রোগী দেখছেন।’’ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘উপযুক্ত রক্ষাকবচ থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। করোনার সঙ্গে লড়াই একটা যুদ্ধক্ষেত্র। সেই লড়াইয়ে চিকিৎসক, নার্স, সাফাইকর্মী, পুলিশ, অ্যাম্বুল্যান্স চালক— সকলে হলেন সৈনিক। যুদ্ধে নেমে পিছিয়ে আসা যায় না। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট যা করেছেন চিকিৎসক সমাজের কাছে এটা দৃষ্টান্ত।’’