Coronavirus in West Bengal

করোনায় মৃত্যু, রাতভর দোকানেই দেহ

কোভিড রিপোর্ট হাতে না-আসা পর্যন্ত সৎকার করা যাচ্ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৪:০১
Share:

১৮ ঘণ্টা পড়ে থাকার পরে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সরানো হচ্ছে করোনায় মৃতের দেহ। বৃহস্পতিবার খান্না মোড়ের কাছে অরবিন্দ সরণিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধের দেহ গত সোমবার থেকে টানা দু’দিন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতেই সংরক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর আত্মীয়েরা। তার জেরে স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ মহল আশ্বাস দিয়েছিল, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয় সেই জন্য কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলা হবে। কিন্তু আমহার্স্ট স্ট্রিটের ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়িতে একটি মিষ্টির দোকানে পড়ে রইল করোনা আক্রান্ত এক প্রৌঢ়ের মৃতদেহ। দেহ পচে যখন দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, তখন অরবিন্দ সেতু লাগোয়া অরবিন্দ সরণি অবরোধ করতে উদ্যত হন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার জেরেই নড়েচড়ে বসে পুর প্রশাসন। দেহটি নিয়ে যাওয়া হয় সৎকারের জন্য।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যায় মৃত ব্যক্তির বয়স ৫৭ বছর। বাড়ি সিঙ্গুরে। সেখানে তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে রয়েছেন। গৌরীবাড়িতে একটি মিষ্টির দোকানে তিনি ম্যানেজারের কাজ করতেন। সেখানেই থাকতেন। ওই একই দোকানে কাজ করেন তাঁর ভাইও। মৃতের ভাই এ দিন জানান, কয়েক দিন আগে সিঙ্গুর থেকে ফেরার পরে দাদা জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁর ডায়াবিটিসও ছিল। ২৯ জুন একটি বেসরকারি ল্যাবে তাঁর কোভিড পরীক্ষা হয়। কিন্তু নিয়মমাফিক বুধবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ল্যাবের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতের ভাই বলেন, “দাদা রাস্তাতেই মারা গিয়েছিলেন। তখনও আমরা জানি না তিনি কোভিড পজ়িটিভ। মেডিক্যালে বলা হয়, সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিতে গেলে দেহ মর্গে রেখে ময়না-তদন্ত করতে হবে। তার থেকে পাড়ার ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে দেহ সৎকার করে ফেলাই ভাল।’’ কিন্তু স্থানীয় ডাক্তার রোগী কোভিড পজ়িটিভ কি না, নিশ্চিত না-হয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে রাজি হননি।

এর পরে দেহ নিয়ে বড়তলা থানার দ্বারস্থ হন মৃতের আত্মীয়েরা। কিন্তু পুলিশের দাবি, কোভিড রিপোর্ট হাতে না-আসা পর্যন্ত সৎকার করা যাচ্ছিল না। মৃতের ভাই এ দিন বলেন, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় সিঙ্গুরের বাড়ি থেকে ফোনে জানতে পারি আশা কর্মীরা এসে বলছেন, দাদার রিপোর্ট পজ়িটিভ। ল্যাবে সিঙ্গুরের ঠিকানা লেখা থাকায় সিঙ্গুর থানার মাধ্যমে সেখানেই খবরটা যায়।’’ কিন্তু তার পরেও কলকাতা পুলিশ, স্বাস্থ্য দফতর বা কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ— কেউই কেন রাতে দেহ সৎকারের বন্দোবস্ত করতে পারলেন না, তা স্পষ্ট নয়। কেনই বা রাতে সরকারি হাসপাতালের মর্গে দেহটি রাখা গেল না, সেই প্রশ্নেরও সদুত্তর নেই। থানার এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, “মৃত ব্যক্তি কোভিড পজ়িটিভ জানামাত্র আমরা সৎকারের বন্দোবস্ত করেছি।”

Advertisement

আরও পড়ুন: কোরবানির টাকায় দুর্গতের সেবা, আর্জি ধর্মগুরুদের

অন্য দিকে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া পুরসভা কারও মৃতদেহ তুলতে পারে না। পুরসভা যখন পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েছে তখনই মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়েছে। কোথাও কোনও দেরি হয়নি।’’

আর মৃতের ভাই জানিয়েছেন, এ দিন সকালে তিনি বেসরকারি ল্যাব থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসার পরে দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যায় পুর প্রশাসন। তত ক্ষণে ১৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: বাড়ির আংশিক ক্ষতির তথ্যও উঠছে তালিকায়

প্রশ্ন হল, কোভিড সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে তা হলে কী নীতি মেনে চলা হবে রাজ্যে? কোভিড পরীক্ষার ফল নিয়ে অপেক্ষাপর্বে দেহ রাখার কী ব্যবস্থা হবে? এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) দেবাশিস ভট্টাচার্যকে ফোন ও এসএমএস করা হলে উত্তর মেলেনি।

মৃতের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ১৪ দিন আলাদা থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।কিন্তু তাঁদের কোভিড পরীক্ষা কবে, কী ভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement