গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সংক্রমণের প্রবণতায় বড়সড় রদবদল নেই। তবে এক দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে গেল রাজ্যে। শুক্রবার মৃতের সংখ্যা বৃহস্পতিবারের থেকে ১৬ বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা উদ্বেগজনক নয়। সুস্থতার বাড়-বৃদ্ধিতেও কিছুটা স্বস্তির রেখা। তবে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হারও কমেছে।
বেশ কিছু দিন ধরে রাজ্যে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। বুধবার মৃত্যু হয়েছিল ৫৩ জনের। বৃহস্পতিবার অবশ্য ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে হয়েছিল ৪১। সেই প্রবণতা বজায় থাকলে সংক্রমণের মতো মৃত্যুর নিরিখেও কিছুটা স্বস্তি মিলত বলেই মনে করছিলেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। এর মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। উত্তর ২৪ পরগনায় ৮ জন মারা গিয়েছেন। নদিয়া ও হাওড়া, দুই জেলাতেই ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ৭।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৫৭ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১১২। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩২২। এর মধ্যে কলকাতায় নতুন আক্রান্ত ৫৪৩ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ৫৩২, হুগলিতে ১৩৯, হাওড়ায় ১৪৬, পশ্চিম বর্ধমানে ১৫২, পূর্ব বর্ধমানে ৮৩, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫৭, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৮৩, বাঁকুড়ায় ১০২, নদিয়ায় ১৪৭, মুর্শিদাবাদে ১০২ এবং দার্জিলিঙে ১০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
আরও পড়ুন: মে মাসেই করোনা আক্রান্ত ৬৪ লক্ষ, সেরো সমীক্ষায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
এর মধ্যেও আশার কথা, রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে। বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হল ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৩। রাজ্যে সুস্থতার হার গত কালকের চেয়ে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৮৬.১০ শতাংশ। বুধবার এই হার ছিল ৮৫.৯৫ শতাংশ। রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৬১।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ১২০০ মৃত্যু, দেশের দৈনিক আক্রান্তও সর্বোচ্চ
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই সংক্রমণের হার যত কম হবে, ততই করোনার সংক্রমণের ক্ষেত্রে তা সদর্থক। শুক্রবার এই হার ৬.৯৭ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হার ছিল ৭.০২ শতাংশ। এক রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬০৯ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)