রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত টানা তিন দিন তিন হাজারের দোরগোড়ায় থাকার পর সোমবার দু’হাজারের নীচে নেমে এল। কিন্তু রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। চিকিৎসকের মহলের বক্তব্য, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ যে ভাবে বাড়ছিল, একই ভাবে এ বারও ওঠা-নামার মধ্যে দিয়েই সংক্রমণ বাড়তে পারে রাজ্যে। তাই দৈনিক আক্রান্ত কমলেও উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, দীর্ঘ ছ’মাস পর দৈনিক সংক্রমণের হার আবার ২০ শতাংশের উপর উঠল। তা যথেষ্টই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সে দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে অক্ষরে অক্ষরে কোভিডবিধি পালনের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের করা কোভিডের ‘সেন্টিনাল সার্ভে’ রিপোর্ট। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যে সব কোভিড উপসর্গ নেই, তাদের পরীক্ষা করে এই সমীক্ষা চালানো হয়। সংক্রমণ নিঃশব্দে বাড়ছে কি না, তা বুঝতেই এই সমীক্ষা। তাতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ১১টি স্বাস্থ্য জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের উপর। তার মধ্যে রয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা, পশ্চিম বর্ধমান, দার্জিলিং এবং কলকাতা।
সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত কোভিড বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯১৫ জন। এখনও পর্যন্ত কোভিডে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬২৬ জন। রাজ্যে নতুন করে যত সংক্রমিত হয়েছেন, তার মধ্যে অধিকাংশই কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী। কলকাতায় আক্রান্ত ৪৯৮ জন। আর উত্তর ২৪ পরগনায় ৫৪৮ জন। কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ওই তিন জেলার কোভিড পরিস্থিতিও প্রশাসনের নজরে রয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া ও বীরভূমেও।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ২৪৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ৮ হাজার ৯৯৬ জনের। দৈনিক সংক্রমণের হার বেড়ে হল ২১.২৯ শতাংশ। রাজ্যে বর্তমানে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে ২৪ হাজার ২০৯।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৪ জুনের তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১৬০। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৩৫। তার আগের দু’দিন ছিল ১২৩ এবং ১৪৮। পরের দু’দিনের সংখ্যা ছিল ১৯৪ এবং ২২৯। ১২ থেকে ১৬ জুন, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১৬০, যা ১৪ জুনের চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৫ জুনের চলন্ত গড় হল ১৩ থেকে ১৭ জুনের আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)