প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে ১৮ বছরের বেশি বয়সির সংখ্যা ৭ কোটি ৯ লক্ষের বেশি। এঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের জন্য মাত্র ৯০ লক্ষের সামান্য বেশি কোভিড টিকার ডোজ় বরাদ্দ হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রের এই টিকা বরাদ্দ থেকেই স্পষ্ট, জুলাই মাসেও রাজ্যে টিকার আকাল বজায় থাকবে।
জুন মাসে দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য ১২ কোটি ডোজ় টিকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। মোদী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, জুলাই মাসের জন্যও সেই ১২ কোটি ডোজ়ই বরাদ্দ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিডের টিকাকরণ কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্তাব্যক্তি বলেছেন, জুলাই বা অগস্ট মাস থেকে দিনে ১ কোটি করে টিকাকরণ সম্ভব হবে। অন্তত জুলাই মাস থেকে যে তা হচ্ছে না, তা স্পষ্ট। কারণ, মাসে ১২ কোটি টিকার ডোজ় হাতে নিয়ে দিনে ১ কোটি করে টিকাকরণ সম্ভব নয়।
একই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও। পশ্চিমবঙ্গে ৩০ জুন সকাল ৭টা পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, ২ কোটি ১৭ লক্ষ ১২ হাজারের কিছু বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ২৯ হাজারের মতো। দ্বিতীয় ডোজ় টিকা পেয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র ৪৯ লক্ষ ৮২ হাজারের কিছু বেশি। এদিকে কেন্দ্রের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে ৭ কোটি ৯ লক্ষর বেশি মানুষ রয়েছেন, যাঁদের বয়স ১৮ বছরের বেশি। অর্থাৎ, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬০ হাজার মানুষের সম্পূর্ণ টিকাকরণ এখনও বাকি। প্রায় ৫ কোটি ৪২ লক্ষ মানুষ কোনও টিকাই পাননি।
জুলাই মাসে রাজ্যে ৯০ লক্ষ ১২ হাজার মতো টিকা মিললে, তার সবটাই যে বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতাল বা টিকাকরণ কেন্দ্রে মিলবে, এমন নয়। এর মধ্যে ৬৭.৫ লক্ষ মতো ডোজ় মিলবে সরকারি কেন্দ্রে, বিনামূল্যে। বাকি ২২.৫ লক্ষ ডোজ় মিলবে বেসরকারি হাসপাতালে। পুরো দাম চুকিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জুন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারই রাজ্যকে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলের জন্য টিকার জোগান দেবে। দেশে মোট যে পরিমাণ টিকা উৎপাদন হবে, তার ৭৫ শতাংশ কেন্দ্র কিনে নেবে। বাকি ২৫ শতাংশ যাবে বেসরকারি হাসপাতালে। কেন এত কম টিকার জোগান দেওয়া হচ্ছে?
কোভিডের টিকাকরণ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, টিকা সংস্থাগুলি যে পরিমাণ টিকা উৎপাদন করবে বলে জানিয়েছে, তার ভিত্তিতেই রাজ্যগুলিকে টিকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। জুন মাসের মতো জুলাই মাসেও সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের থেকে ১২ কোটি ডোজ় মিলবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তার মধ্যে ১০ কোটি কোভিশিল্ড, বাকি ২ কোটি কোভ্যাক্সিন। পশ্চিমবঙ্গে ৯০ লক্ষ ১২ হাজার ডোজ় টিকা বরাদ্দ করা হচ্ছে, তার মধ্যে কোভিশিল্ড ৭৪.৭৯ লক্ষ। বাকিটা কোভ্যাক্সিন। কেন্দ্রের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, অন্য কোনও টিকা অন্তত জুলাই মাসে মিলবে বলে কেন্দ্রই আশা করছে না। রাজ্যের জনসংখ্যা, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ভিত্তিতে টিকা বরাদ্দ হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের মাধ্যমেও কোন রাজ্যে কত টিকা দেওয়া হবে, কোন হাসপাতাল মাসে সর্বাধিক টিকা পাবে, তা-ও কেন্দ্র ঠিক করে দিচ্ছে।
মোদী সরকার আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ কোটি ৮৮ লক্ষর দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। সেই লক্ষ্য কি পূরণ হবে? কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ৯৪.৪ কোটি। দু’ডোজ় টিকা দিতে প্রায় ১৮৬ কোটি ডোজ় টিকা দরকার। এর মধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫১.৬ কোটি টিকা মিলবে। অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১৩৫ কোটি টিকা মিলবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এর আগে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিল, অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ২১৬ কোটি ডোজ় টিকা মিলবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রই তার থেকে ৮১ কোটি কম বলছে। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, নোভাভ্যাক্স, ভারত বায়োটেকের নেজ়াল ভ্যাক্সিন, জেনোভা বায়োফার্মা নিয়ে এখনও নিশ্চয়তা নেই। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারী সংস্থাও আগের হিসেব মতো টিকা জোগাতে পারবে না।