ফাইল চিত্র।
করোনা আক্রান্ত প্রৌঢ়কে উন্নততর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় নার্সিংহোম থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার দরকার থাকলেও শয্যা পেলেন না রোগীর পরিজনেরা। সব জায়গাতেই একটাই কথা— ‘বেড নেই!’
কেন? বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত কলকাতা শহর এবং শহরতলির ২৪টি বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ২৪৮৫টি কোভিড শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে মাত্র ১৭১টি।
প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালই নিজের মতো করে শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানাচ্ছেন পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া। তিনি বলছেন, ‘‘করোনা রোগীকে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনেই কাজ হচ্ছে। যাতে অহেতুক শয্যা আটকে না থাকে। কম উপসর্গের রোগীদের স্যাটেলাইট সেন্টারে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
কোভিড-শয্যায় ঘাটতি মানুষের চিন্তা বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, সরকারি এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজারের মতো। ৮০-৮৫% শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে কমবেশি ৭,০০০ শয্যার প্রায় পুরোটাই ভর্তি। শহর এবং শহরতলিতে জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব বেশি বলে সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘গত বছর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোভিড সংক্রমণ ছিল দৈনিক সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি। এখন তা ১৫-১৬ হাজারের মতো। সরকার সব চেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী সাত-আট দিনের মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।’’
সোমবার নির্বাচন কমিশনের থেকে আগাম লিখিত অনুমতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, শয্যা, অক্সিজেন এবং প্রতিষেধক ব্যবস্থাপনা নিয়েই বৈঠক হয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই শয্যা সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার করা হয়েছে। তার পরেও এই পরিস্থিতি হওয়ায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত— যেখানে ভোট হয়ে গিয়েছে, অথচ বিভিন্ন ভবনে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রকে চিঠি লিখিত ভাবে অনুরোধ করবে রাজ্য। খালি ভবনগুলি কোভিড-পরিকাঠামো তৈরির কাজে ব্যবহার করা হবে।
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য কমিশন প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালকে অন্তত ৬০% শয্যা কোভিডের জন্য বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে, হাসপাতালগুলির ফাঁকা জায়গা, লবি-পার্কিং লটেও পরিকাঠামো তৈরির অনুরোধ করা হয়েছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘পার্কিং লটে শয্যা পেতে দিলেই তো হবে না। অক্সিজেন থেকে বিভিন্ন পরিকাঠামোর বিষয় রয়েছে।’’ তবে এ দিন ৬২টি থেকে ১৬০টি শয্যা করা হয়েছে এই হাসপাতালে।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে হাসপাতাল পরিকাঠামো তৈরি করতে মেডিকা কর্তৃপক্ষকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে অতিরিক্ত ৩০০টি কোভিড শয্যা পাওয়া যাবে। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামেও এমন পরিকাঠামো তৈরি করা যায় কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকা কর্তৃপক্ষ। চার্নক হাসপাতাল হজ হাউসের সেফ হোমেও হাসপাতাল পরিকাঠামো তৈরি করবে। সেখানে অন্তত ২০০টি কোভিড-শয্যা মিলবে। এ ছাড়াও আর এন টেগোর সল্টলেকে তাদের নেত্রালয়ে কোভিড চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করতে সম্মত হয়েছে। ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালকে পুরোপুরি কোভিড হাসপাতালে পরিণত করতে ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য। এসএসকেএম হাসপাতালের অধীনে উত্তীর্ণ সেফ হোমে পাইপ-লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধা যুক্ত করে সেটিকেও হাসপাতাল পরিকাঠামোয় পরিণত করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘স্যাটেলাইট সেন্টারগুলিতেও এখন যে ৭০০-৮০০ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে, সেই সংখ্যাকে দ্রুত ১,০০০ করার কাজ চলছে।’’
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট কতগুলি শয্যার ক’টি খালি রয়েছে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে তার একটি পরিসংখ্যান আপলোড করা হয়। কিন্তু অনেকেরই অভিযোগ, ওই সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে না। এক স্বাস্থ্য-কর্তা জানাচ্ছেন, পরিসংখ্যান ‘রিয়েল টাইমের’ না হওয়ায় বিপত্তি। ওই কর্তার কথায়, ‘‘তাই ইন্টিগ্রেটেড হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। সেখান থেকেই শয্যার ব্যবস্থা করা হবে।’’ স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে কোভিড ব্যবস্থাপনার একটি পোর্টাল চালু হওয়ার পথে।
এর আগে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন, রামকৃষ্ণ মিশন সেবাপ্রতিষ্ঠান এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘকে কোভিড-পরিকাঠামো বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল রাজ্য। রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ২৪টি আইসোলেশন শয্যা, ৪৬টি কোভিড শয্যা এবং ৪টি আইসিইউ শয্যা মিলিয়ে মোট ৭৪টি শয্যার পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন জানিয়েছে, ৬ থেকে ১৪ বছরের কোনও শিশুর মা-বাবা অথবা পরিবারের রোজগেরে সদস্য কোভিডে মারা গেলে এবং শিশুদের দেখার কেউ না থাকলে তাদের নিখরচায় ভর্তি করে দেখাশোনা করা হবে।