গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ধাপে ধাপে বাড়ছে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত কয়েক দিন ধরেই দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যাটা ৩ হাজারের কাছাকাছি। রবিবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। গত কয়েক দিন ধরেই গড়ে ৫০ জনের বেশি মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। এ দিনও মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। তার জেরে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ২ হাজার ৫৯ জন। তবে রাজ্যের সুস্থতার হার সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোজই তা ৭০ শতাংশের উপরেই ঘোরাফেরা করছে।
শনিবার রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৪৯ জন। এ দিন সংখ্যাটা সামান্য কমেছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৯৩৯ জন। এর ফলে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৯৫ হাজার ৫৫৪ জন।
প্রথম থেকেই রাজ্যের মধ্যে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটি ক্ষেত্রেই প্রথমের সারিতে রয়েছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন রাজ্যে যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ২১ জনই কলকাতার বাসিন্দা। ১৫ জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। হাওড়ায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪ জন মারা গিয়েছেন হুগলিতেও। দার্জিলিঙে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমানে ১ জন করে মারা গিয়েছেন। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: আত্মীয়-প্রতিবেশীরা নারাজ, পুলিশকেই দাহ করতে হল বৃদ্ধার দেহ
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। রবিবার প্রকাশিত বুলেটিনে রাজ্যে সংক্রমণ হার ১১.২০ শতাংশ। যা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। গত পাঁচ দিন ধরেই সংক্রমণের হার ১২-১৩ শতাংশ থেকে নেমে ১১ শতাংশের গণ্ডিতেই বন্দি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২৬ হাজার ২৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত এক দিনের নিরিখে সর্বোচ্চ।
সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটি ক্ষেত্রেই আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও আশা জাগাচ্ছে রাজ্যের সুস্থতার হার। ৯৫ হাজারেরও বেশি করোনা রোগীর মধ্যে মোট ৬৭ হাজার ১২০ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে রবিবার ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ৯৯৬ জন। ২৬ হাজার ৩৭৫ জন এখন সক্রিয় করোনা রোগী। রাজ্যে সুস্থতার হার ৭০.২৪ শতাংশ।
এ দিন কলকাতায় নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে ৬১৫ জনের। তার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৮৮ জন। এ ছাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩০৬, হুগলিতে ৯৫, হাওড়ায় ১৮৫, পশ্চিম বর্ধমানে ১০৮, পূর্ব বর্ধমানে ৮৩, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৭৭, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮২, বাঁকুড়ায় ৮৬, বীরভূমে ৪০, মুর্শিদাবাদে ৭৯ এবং নদিয়ায় ৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এ দিন।
উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় এ দিন নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তার মধ্যে কোচবিহারে ৯২, দার্জিলিঙে ৬৮, জলপাইগুড়িতে ৩৪, উত্তর দিনাজপুরে ৩৬, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬৩, মালদহে ৩৮ জনের নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে এ দিন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)