গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের কারণে দু’টি সরকারি কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আগামী সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে ‘ছাত্র সপ্তাহ’ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। তা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি স্থগিত রাখা হয়েছে জেলায় জেলায় ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিও। সরকারি সূত্রের দাবি, দু’টি কর্মসূচিই ‘বাতিল’ নয়। ‘স্থগিত’ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হ্রাস-বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সূচি পরে ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়তে ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ, সোমবার থেকে কিছু কিছু বিধিনিষেধ আবার চালু করা হবে। তেমন হলে স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুদিনের জন্য ‘ছুটি’ ঘোষণা করা হতে পারে। সরকারের তরফে প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে যে ভাবে রাজ্য এবং বিশেষত কলকাতায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন নবান্ন। শনিবার ওই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয়, সোমবারের দু’টি সরকারি কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখা হবে।
তবে নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখনই ‘আংশিক লকডাউন’ বা ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ জারির কথা ভাবা হচ্ছে না। এখনও বন্ধ হচ্ছে না ট্রেন, বাস বা মেট্রো পরিষেবাও। গোটা পরিস্থিতিই প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ জারির কথা ভাবা হবে বা বিধিনিষেধের আওতা বাড়ানোর কথা ভাবা হবে।
সরকারি আধিকারিকদের বক্তব্য, রাজ্যে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক ভাবে বাড়লেও হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগীর ভিড় উপচে পড়ার মতো ঘটনা এখনও দেখা যায়নি। অক্সিজেন বা অন্য চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার অভিযোগও ওঠেনি। তা ছাড়া, সংক্রমণের হার বাড়লেও মৃত্যুর হার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠেনি। অন্তত এখনও পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে তাই আপাতত ‘ধীরে চলো নীতি’ নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তবে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সব রাস্তাই খোলা রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন। উপসর্গযুক্ত রোগী ২০ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ১৭ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। মাত্র ৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। জোড়া টিকাকরণের ফলেই এ বার উপসর্গযুক্ত রোগী এবং মৃত্যুর হার কম বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। তবে একইসঙ্গে তাঁরা হু-হু করে সংক্রমণ বাড়তে থাকা নিয়েও গভীর উদ্বেগে। তাঁদের বক্তব্য, মানুষকে সচেতন হতে হবে। একা প্রশাসনের পক্ষে কঠোরতম বিধিনিষেধ আরোপ করেও এই সংক্রমণের ঢেউ সামাল দেওয়া সম্ভবপর হবে না। চিকিৎসকেরা বারবারই বলছেন, বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব-সহ অপরাপর কোভিডবিধিও মেনে চলতে হবে। তাঁদের মতে, করোনার এই ঢেউ তিন থেকে ছ’সপ্তাহ চলার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সময়টায় সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে।