আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বাড়ন্ত হলেও রাজ্যে সুস্থতার হার বাড়ছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উৎসবের আবহে দুশ্চিন্তা আরও বাড়াল এ রাজ্যের দৈনিক করোনা-সংক্রমণের পরিসংখ্যান। এখনও পর্যন্ত এক দিনে সবচেয়ে বেশি জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াল শনিবার। এই নিয়ে টানা তিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা চলে গেল সাড়ে তিন হাজারের উপর। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি। অন্য দিকে, পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হারে এ দিন সামান্য উন্নতি হলেও কমেছে সুস্থতার হার। পাশাপাশি, করোনা সংক্রমণের জেরে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যাও স্বস্তিতে রাখছে না স্বাস্থ্য দফতরকে।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত শনিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৯১ জন। দৈনিক পরিসংখ্যানের নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের ১৭ মার্চ এ রাজ্যে প্রথম কোভিড-রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তার পর থেকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও গত বৃহস্পতিবারের আগে কখনই তা সাড়ে তিন হাজারের গণ্ডি পেরোয়নি। তবে বৃহস্পতিবারই প্রথম সেই গণ্ডি অতিক্রম করে ৩ হাজার ৫২৬-এ পৌঁছয়। পরের দিন সেই সংখ্যাকেও ছাপিয়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৭৩-এ। এ দিন দেখা গিয়েছে আগেকার যাবতীয় রেকর্ড ভেঙেছে দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ২ লক্ষ ৯১ হাজার ১৯৪-এ।
গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বাড়ন্ত হলেও রাজ্যে সুস্থতার হার বাড়ছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গোটা রাজ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮৩৮ জন। ফলে এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৭৯৩। রাজ্যের কোভিড-চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ২৭ অগস্ট থেকে এ রাজ্যে সুস্থতার হার ৮০ শতাংশের গণ্ডি পার করেছে। ক্রমশ তা বাড়লেও এ দিন শুক্রবারের তুলনায় তা সামান্য নিম্নমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭.৮৬ শতাংশে। গত কাল তা ছিল ৮৭.৯০ শতাংশ।
গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।
সুস্থতার হার কমলেও খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে সংক্রমণের হার বা পজিটিভিটি রেট। গত কালের ৮.৪০ শতাংশ থেকে কমে তা দাঁড়িয়েছে ৮.৩৮ শতাংশে। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক।
আরও পড়ুন: জনতার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তো আমার নিজের পাগড়িও খুলে গিয়েছে অনেক বার
আরও পড়ুন: দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমল ১০ হাজারের বেশি
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ৩২ জন। পরিসংখ্যানের নিরিখে তা শুক্রবারের (৩ হাজার ৬৯ জন) থেকে সামান্য কম হলেও আপাত ভাবে স্বস্তিজনক বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
সুস্থতার হার স্বস্তি দিলেও উদ্বেগ তৈরি করছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত কালের মতোই গোটা রাজ্যে এ দিন মারা গিয়েছেন ৬২ জন। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৫ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু ঘটল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।
করোনাভাইরাসের জেরে রাজ্যে মৃতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। এ শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় মারা গিয়েছেন ১২ জন। এ ছাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭, হাওড়ায় ৯, পূর্ব মেদিনীপুরে ৩, পশ্চিম বর্ধমানে ২ এবং কোচবিহার, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমানে ১ জন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন সৌমিত্র, কিন্তু উদ্বেগ কাটেনি
আরও পড়ুন: করোনা পরীক্ষায় নারাজ হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার, দাবি চিকিৎসকদের
এ রাজ্যে আক্রান্তের তালিকায় বরাবরই পাল্লা ভারী কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার। এ দিন আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ শহরে মোট ৭৮৩ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭৫৬ জন। দৈনিক সংক্রমণের পরিসংখ্যানে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২২১), হাওড়া (১৯৭), পূর্ব মেদিনীপুর (১৮১), নদিয়া (১৪৫), হুগলি (১৩১), মালদহ (১১৩), পশ্চিম মেদিনীপুর (১১২) জেলাও। এ সব জেলায় এক দিনে ১০০-রও বেশি কোভিড রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।