ফাইল চিত্র।
সোমবার এক প্রসূতি মায়ের করোনা-পজ়িটিভ ধরা পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। নববর্ষে তাতে নতুন মাত্রা যোগ করল আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা-আক্রান্ত এক মহিলার (তাঁর কিডনির অসুখও ছিল) মৃত্যুর ঘটনা। সরকারি ভাবে অবশ্য এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১১০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০। মৃতের সংখ্যা সাত।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ঘটনার সঙ্গে চিনার পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রবিবার ওই বেসরকারি হাসপাতালে কিডনির অসুখে আক্রান্ত এক করোনা-রোগীর মৃত্যু হয়। এর পরে হাসপাতালে আরও চার জন রোগী, দু’জন চিকিৎসক, নার্স এবং তিন জন স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এ দিন যে করোনা-রোগীর মৃত্যু ঘিরে কর্তৃপক্ষ অসুবিধায় পড়েছেন, তিনিও ওই হাসপাতাল থেকে এসেছিলেন।
মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, বরাহনগরের বাসিন্দা বছর সাতান্নর ওই প্রৌঢ়ার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু সে বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজকে কিছু জানানো হয়নি। সিএমসি’র জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নেফ্রোলজি বিভাগ না থাকায় রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ তাঁরা দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘বিশেষ অনুরোধে’ প্রৌঢ়াকে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। সোমবার তাঁকে পাঠানো হয় আইসোলেশন ওয়ার্ডে। রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে স্বাস্থ্যভবনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, প্রৌঢ়া করোনা-পজিটিভ।
কোভিড-নন কোভিড বাছতে নির্দেশিকা
• জরুরি বিভাগে পিপিই নিরাপত্তারক্ষীদের। সরকারি হাসপাতালে থার্মাল স্ক্যানারে রোগী, পরিজনদের দেহের তাপমাত্রা মাপবেন রক্ষী। পরিজনের জ্বর ধরা পড়লে ফিভার ক্লিনিকে। রোগী সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারের কাছে
• সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার পরবেন পিপিই
• সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে রোগী ভর্তি করবেন জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারেরা
• শ্বাসকষ্টের রোগীদের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন আলাদা কক্ষে চিকিৎসা
• কোভিড রোগী হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও পৃথক ওয়ার্ডে ভর্তি। পৃথক লিফট এবং ট্রলি। স্বাস্থ্যকর্মীরা পরবেন পিপিই
• আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিজনেরা যাবেন না। মাস্ক ছাড়া রোগী, পরিজনের হাসপাতালে ঢোকা নিষিদ্ধ
• সাধারণ রোগীদের মধ্যেই থাকছেন করোনা-আক্রান্ত রোগীও। বিপত্তি এড়াতে নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের
এই ঘটনার জেরে মেডিসিনের সব রোগীকে গ্রিন বিল্ডিংয়ে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। গ্রিন বিল্ডিংয়ের চার তলায় মেল মেডিসিন এবং পাঁচ তলায় ফিমেল মেডিসিনের জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। সিএমসি’র এক প্রশাসক-চিকিৎসক জানিয়েছেন, যে রোগীদের সঙ্গে ওই প্রৌঢ়া ছিলেন, তাঁদের নমুনা পরীক্ষার কথা ভাবা হয়েছে। ছ’জন ইন্টার্ন এবং তিন জন পিজিটি’কে একটি হোটেলে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। আরও দু’জন জুনিয়র চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে গৃহ পর্যবেক্ষণে। সোমবার স্ত্রীরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন এক প্রসূতির করোনা ধরা পড়ে। ওই প্রসূতির সদ্যোজাতের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: এ বার গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে নজর বস্তিতে
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজি বলেন, ‘‘মেডিসিন বিভাগের ঘটনার প্রেক্ষিতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এতে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন নেই। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে করণীয় সবই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাকি যা বলার স্বাস্থ্য ভবন বলবে।’’ সোমবারের পর চিনার পার্ক সংলগ্ন ওই হাসপাতালের আরও এক চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এখনও তাঁদের ১৫ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এ দিন দু’জন আক্রান্ত ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে এক জন কড়েয়ার, অন্য জন টালা এলাকার বাসিন্দা। এম আর বাঙুর হাসপাতালে এখন ৯ কোভিড রোগী ভর্তি আছেন।
গত কয়েক দিনে কয়েক জন করোনা-আক্রান্তের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তবে করোনাতেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করবে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি। মৃতের তালিকায় রয়েছেন আলিপুরের সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধ, এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধ এবং জগদ্দলের এক প্রৌঢ়। এ দিন সল্টলেকের কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তমলুকের এক বাসিন্দার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে সরকারি ভাবে এ বিষয়ে এখনও জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: অন্যকে বাঁচিয়ে তৃপ্তি জীবনযুদ্ধে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)