সাফাইকর্মীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে সতর্ক-বার্তা পৌঁছে দিতে ফের শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে বেরোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে বেরিয়ে মঙ্গলবার রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, তপসিয়া, ট্যাংরার মাঠপুকুর হয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ কমিশনার-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তারা। গাড়িতে বসে মাইকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি থেকে নেমে সাফাই-কর্মীদের মাস্ক, গ্লাভস বিলি করেন। তাঁদের হাতে স্যানিটাইজার দেন, কী ভাবে ঝাঁটা স্যানিটাইজ করে ঝাঁট দিতে হবে, তা-ও হাতে-কলমে সাফাই-কর্মীদের দেখিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রথমে এ দিন দুপুরে রাজাবাজার গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে পার্ক সার্কাস, তপসিয়া ও ট্যাংরার মাঠপুকুরে যান। পার্ক সার্কাসে মমতা বলেন, ‘‘কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নিয়ে আমরা এই সমস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছি। আপনারা ঘরবন্দি আছেন। লকউাউন চলছে। আপনাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে জানি।এই অসুবিধার মধ্যে আমি নিজে বাইরে বেরোলেও আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছি না। আপনাদের খোঁজ নিতে এসেছি।’’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘সকলকে অনুরোধ, দয়া করে এই ক’টা দিন কষ্ট করে একটু বাড়িতে থাকবেন। আপনার নিঃশ্বাস, আপনার ছোঁওয়া যাতে অন্য কাউকে রোগগ্রস্ত করতে না পারে, সে দিকে নজর রাখবেন।’’ শরীর সুস্থ রাখতে সর্বদাই সকলকে মাস্ক পরতে আবেদন জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। করোনাকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব মেনে চলবেন।’’
নানা এলাকায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘লকডাউন করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, কেন্দ্রও লকডাউন করেছে। কিন্তু সব কিছু বন্ধ থাকায় অনেকের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি, তা সত্ত্বেও আপনাদের ভালো থাকতে হবে। আপনাদের শুভ কামনা জানানোর জন্যই এখানে এসেছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, খাবার, ওষুধ থেকে শুরু করে যে কোনও সমস্যা হলে পুলিশকে জানান। এই বিষয়ে পুলিশকে যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া আছে। দু’টি পরিবারের উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, দার্জিলিঙে এক জনের থেকে একই পরিবারের ১০ জন এবং এগরায় ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং, সতর্ক থাকতেই হবে।
লকডাউনের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই সতর্কতা-প্রচার নিয়ে অবশ্য কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সঙ্গে অনেক পুলিশ, অনেক ক্যামেরা, লকডাউনের মধ্যে নিজে বারবার বেরিয়ে অন্যদের লকডাউন মানতে বলা— এটার দরকার কী? নিজের প্রশাসনের উপরে কি মুখ্যমন্ত্রীর ভরসা নেই?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার রাস্তায় বেরোলে বাকিরাও প্ররোচিত হতে পারেন। হোমগার্ড বা সিভিক ভলান্টিয়ার যে কাজ করতে পারেন, সেটা করতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে গেলে কি খুব কাজের কাজ হয়? নাকি বিজেপির ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলা হয়? ’’ আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘ইনস্পেক্টরের ভূমিকা মুখ্যমন্ত্রী পালন করছেন কেন? কলকাতায় যেমন করছেন, এ বার কি জেলায় জেলায় সতর্কতার বার্তা এবং মাস্ক দিতে যাবেন?’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘সকলকে আবার অনুরোধ করছি, রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে লড়াইয়ের সময় নয়! ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: করোনা হাসপাতালে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল রাজ্য সরকার
আরও পড়ুন: বেসরকারি স্কুলের ফি আংশিক মকুবের দাবি
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)