প্রতীকী ছবি।
কোভিড পর্বের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গ ‘ডেথ অডিট’-এর যে কথা বলেছিল, এত দিন বাদে কার্যত সেই পথেই হাঁটার কথা জানাল কেন্দ্র।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এই পদ্ধতির প্রস্তাব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ একটা সময় এ কথা বললেও তখন কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠক হয়েছে বেশ ইতিবাচক পরিবেশে। প্রধানমন্ত্রী যেমন কোভিড-মোকাবিলায় রাজ্যগুলির উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রের পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন জানিয়েছেন খোলাখুলি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব বৈঠকে জানান, শুধুমাত্র কোভিডের কারণে এবং করোনার সঙ্গে অন্য রোগভোগে (কো-মর্বিডিটি) হওয়া মৃত্যুর যাচাই বা অডিট হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রের যুক্তি, করোনা থাকলেও বেশিরভাগ রোগীর মৃত্যুই ঘটছে অন্য রোগভোগের কারণে। তাই মৃত্যুর কারণ আলাদা করে খতিয়ে দেখা দরকার।
মমতা তখন জানান, কো-মর্বিডিটির সমীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এমনিতেই করছে। সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিনেও কো-মর্বিডিটির ব্যাখ্যা থাকে পৃথক ভাবে। এমনকি, কোভিডের প্রায় শুরু থেকে মৃত্যুর অডিট করানোর পথে হেঁটেছিল রাজ্য। তখন রাজ্যের সেই পদক্ষেপের সমালোচনা হয়েছিল। ফলে এখন কেন্দ্র মৃত্যুর অডিট করাতে চাইলে রাজ্যের আপত্তি নেই। বৈঠকে মমতা বলেন, “এ রাজ্যে অন্য রোগবালাই থাকা প্রায় ৮৯ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। গোটা দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। কারণ, ঠিক মতো পরিস্থিতির মোকাবিলা হচ্ছে।”
কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই সেই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, কোন ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে, তার বিধি তৈরি করে দিক কেন্দ্র। পাশাপাশি, নাকে লাগানোর জন্য অক্সিজেনের নল এবং ভেন্টিলেটরও কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন মমতা। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী সব রাজ্যের হয়ে ভ্যাকসিন ব্যবহারের বিধি তৈরির অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
কোভিডের মোকাবিলা রাজ্য কী ভাবে করছে, তার ব্যাখ্যাও প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, নিখরচায় সরকারি হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধা, একশোর বেশি সেফ হাউজ, টেলিফোনে চিকিৎসা-ওষুধের পরামর্শ, কোভিড-পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার সুবিধা রয়েছে রাজ্যে। এ দিন প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীর বলার জন্য পাঁচ মিনিট করে বরাদ্দ ছিল। মমতা হাল্কা ভাবেই জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাঁর বরাদ্দ সময়ের কিছুটা ব্যবহার করলেও তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বক্তব্য শেষ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকেই কোভিড-দুর্ভোগ নিয়ে একটি কবিতাও লিখে ফেলেন মমতা। তার মধ্যে একটি লাইন—‘মানবিক পৃথিবীতে কালো আতঙ্কের হতাশা- নিঃশ্বাসে শুধু অবিশ্বাস’।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)