ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুমে আমজনতা বেলাগাম হয়ে পড়ায় পুজোর পরে কোভিড সংক্রমণ এক লাফে বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু পুজোর আগেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেবী দুর্গার সঙ্গেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের বঙ্গে আগমনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরোধ নতুন মাত্রা নেবে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর যে চার রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে সেগুলি হল— কেরল, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় এবং কর্নাটক। এর মধ্যে একমাত্র কর্নাটকই বিজেপি-শাসিত। ফলে প্রতিনিধি দল পাঠানোর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, এই পাঁচটি রাজ্যেই গত কয়েক দিনে নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৭০০ ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত। এই দলগুলি রাজ্যকে করোনা নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি, পরীক্ষা, সংক্রমণ রোখা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা, আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সাহায্য করবে।
কেন পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল
গত কয়েক দিনে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি
• অ্যাক্টিভ রোগী ৩১,৯৮৪, গোটা দেশের তুলনায় রাজ্যের হার ৪%
• মোট আক্রান্ত ৩,০৯,৪১৭, গোটা দেশের তুলনায় রাজ্যের হার ৪.২৯%
• প্রতি ১০ লক্ষে আক্রান্ত ৩,১০৬
• মোট সুস্থ ২,৭১,৫৬৩, সুস্থতার হার ৮৭.৭৭%
• মোট মৃত্যু ৫,৮৭০, মৃত্যুহার ১.৯০%
• প্রতি ১০ লক্ষে মৃত্যু ৫৯
• প্রতি ১০ লক্ষে করোনা পরীক্ষা ৩৭,৮৭২
• পরীক্ষায় পজ়িটিভ ফলের হার ৮.২%
*হিসেব ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত
**সূত্র কেন্দ্রীয় সরকার
প্রতিটি কেন্দ্রীয় দলের দায়িত্বে থাকবেন এক জন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নোডাল অফিসার। জনস্বাস্থ্যের দিকটি দেখার জন্য এক জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থাকবেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন এক জন চিকিৎসক। তাঁর কাজ হবে সংক্রমণ রোখা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে রাজ্য কী কী পদ্ধতি ও প্রোটোকল মানা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা। এ রাজ্যে আসা দলের নেতৃত্বে থাকবেন মনমীত নন্দা। বেঙ্গল ক্যাডারের অফিসার মনমীত এ রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের কমিশনার ছিলেন।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাদের রাজ্য জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে দুর্গাপুজোর জন্য বাড়তি সতর্কতার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় দল পুজোর পরে এলেই সুবিধা হবে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ না-খুললেও সরকারের অন্দরের ব্যাখ্যা, এমন বিশেষজ্ঞ দল এর আগেও এসেছে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হয়েছিল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তবে গত ঘটনা হল, গত এপ্রিলে কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রক দলের পরিদর্শন ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অতিমারি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিল মমতার সরকার। অন্য দিকে, রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন আন্তঃমন্ত্রক দলের প্রতিনিধিরা। পরে আর একটি দল রাজ্যে পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তখন অবশ্য অত শোরগোল হয়নি। এখন বিধানসভা নির্বাচন আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করেই বিজেপি ভোটপ্রচার শুরু করে দিতে চাইছে। এমন সময়ে কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে করোনা মোকাবিলায় গাফিলতির অভিযোগ তোলার চেষ্টা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও এক স্বাস্থ্যর্কতার দাবি, কেন্দ্রের দলটি রাজ্যের কাজের যাচাই করতে আসছে না, তারা আসছে সহযোগিতা করতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও বলেছে, কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সময়ে রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে। তারা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যের সমস্যাগুলি সরেজমিনে বুঝে আসে, যাতে সেই সব বাধা দূর করা সম্ভব হয়।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)