একাধিক অভিযোগ নিয়ে মুখ্যসচিবকে চিঠি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের।
আর কিছু রাজ্যের তরফে দেওয়ার নেই। করোনা আবহে রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলকেযা তথ্য দেওয়ার দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব এমনটাই জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিওআর তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।এর মধ্যেই এ দিন দুপুরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একাধিক খামতির কথা তুলে ধরে রাজ্যকে দু’টি চিঠি পাঠানকেন্দ্রীয় ওই দলের প্রধান। ঘটনাচক্রে তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধি ওই দলের সঙ্গে দেখা করেন। তার পর কেন্দ্রীয় দল পরিস্থিতি দেখতে ফের বেরয়।
রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে লেখা ওই জোড়া চিঠিতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের একাধিক খামতির কথা তুলে ধরেন কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় দলটির প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং বাঙুর হাসাপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে একাধিক অনিয়ম চোখে পড়েছে। দেখা গিয়েছে, পাঁচদিন পরেও কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাননি অনেকে। কারও কারও শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরাও পড়েনি। রিপোর্ট দিতে এত দেরিই বা হচ্ছে কেন? এ ভাবে হাসপাতালে ভিড় করে থাকলে যাঁরা সংক্রমিত হননি, তাঁরাও তো সংক্রমিত হয়ে পড়বেন।’’
এমআর বাঙুর হাসপাতালে রোগী ভর্তির সময় সামাজিক দূরত্ব একেবারেই বজায় রাখা হচ্ছে না বলেও ওই চিঠিগুলিতে অভিযোগ করেছেন অপূর্ব চন্দ্র। তিনি লিখছেন, ‘‘অন্য কোথাও থেকে রেফার করা হয়েছে বলেই বাঙুরে এসেছেন রোগীরা। অথচ সেখানে তাঁদের সাহায্য করার কেউ নেই। এর ফলে তো হাসপাতালে রিপোর্ট না করেই ফিরে যেতে পারেন যে কেউ।’’ আগে প্রতিদিন ৪০০ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা হলেও, গত চারদিনে সংখ্যাটা তা ৯০০-য় গিয়ে ঠেকেছে বলে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় দলকে জানানো হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে অপূর্ব লিখেছেন, ‘‘যাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে কতজনের প্রথম বার পরীক্ষা হচ্ছে, আর কত জনের আগেও পরীক্ষা করা হয়েছে, তার উল্লেখ নেই।’’
মুখ্যসচিবকে লেখা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: প্রতিনিধি পাঠাল রাজ্য, হাওড়া পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় দল
বাঙুর হাসপাতালে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে। লেখা হয়েছে, ‘‘এই মুহূর্তে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ১২টি ভেন্টিলেটর বেড রয়েছে। অথচ বাঙুরে কোভিডের চিকিৎসা করাচ্ছেন ৩৫৪ জন। প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর পাওয়া যায় না।সেইসময় রোগীকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়বলে আইএমসিটি (কেন্দ্রীয় দল) জানতে পেরেছে।’’
দিন কয়েক আগে একটি হাসপাতালের অব্যবস্থা সংক্রান্ত ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয় ভিডিয়োটি এমআর বাঙুর হাসপাতালের। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, ওয়ার্ডে রোগীদের মাঝখানেই একটি বেডে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। চিঠিতে সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন অপূর্ব চন্দ্র। লিখেছেন, ‘‘মৃত্যুর পর ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পেতেই ৪ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। তার পর দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে ওয়ার্ডের মধ্যে দেহ ফেলে রাখা হচ্ছে কেন, তার সদুত্তর নেই। ফেলে রাখা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে রাজ্য সরকারের তরফে ১০ লক্ষ টাকা বিমার ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদিও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমা ঘোষণা করেছে। এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা দু’টির মধ্যে যে কোনও একটা বেছে নিতে পারেন বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছে। কিন্তু এই সংক্রান্ত এই কোনও নির্দেশিকা তাঁদের হাতে নেই বলেও ওই চিঠিতে লিখেছে কেন্দ্রীয় দল।
করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় দল।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: বিশ্রী ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই আপনার এত কৌশল: ফের তীব্র আক্রমণে ধনখড়
করোনা মোকাবিলায়রাজ্য সরকার যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে, এ দিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় দল। কী কারণে ওই কমিটি গঠন করা হল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠির ওই অংশে লেখা হয়েছে, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েপ্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তাঁর প্রেজেন্টেশনে ২৩ এপ্রিল আমাদের জানিয়েছিলেন, করোনা আক্রান্ত কারও যদি পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকেকরোনায় মৃত বলে গণ্য করা যায় না। এটা আইএমসিটির কাছে যুক্তিগ্রাহ্যলাগছে না। হাসপাতালে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুরএই তুলনার ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে।’’ আর সে কারণেই বেশ কিছু বিষয় জানতে ওই চিঠির মাধ্যমে রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)