—নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়ন্ত্রণী নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী এখন সপ্তাহে শুধু সোম, বুধ ও শুক্রবার পুণে থেকে সরাসরি যাত্রী-উড়ান আসছে কলকাতায়। তাই মঙ্গলবার কোভিডের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ এই শহরে পৌঁছে দেওয়াকে ঘিরে জলঘোলা হল বিস্তর। পণ্য-বিমানে তাকে পৌঁছতে হল কলকাতায়। নিষেধাজ্ঞা না-উঠলে এর পরে নির্দিষ্ট দিনে কলকাতা তথা রাজ্যে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা।
তবে পুণে থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোভিশিল্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানত যাত্রী-বিমানকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এ দিন পুণে থেকে যে-আটটি উড়ানে দিল্লি, চেন্নাই, আমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, বিজয়ওয়াড়া, ভুবনেশ্বর, পটনা, বেঙ্গালুরু, লখনউ ও চণ্ডীগড়ে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে হায়দরাবাদ-বিজয়ওয়াড়া-ভুবনেশ্বর ছাড়া সবই ছিল যাত্রী-উড়ান। অর্থাৎ পুণে থেকে বেশির ভাগ শহরে নির্ধারিত উড়ানে যাত্রীরা যেমন ছিলেন, সেই সঙ্গে তার পেটে পণ্য রাখার জায়গায় ছিল কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনে ভরা বাক্স।
হায়দরাবাদের মতোই ব্যতিক্রম কলকাতা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, এ দিন পুণে থেকে কলকাতার কোনও যাত্রী-উড়ান না-থাকায় বাধ্য হয়েই পৃথক ভাবে পণ্য-বিমানে তা পাঠাতে হয়েছে। যাত্রী-উড়ানের পেটে পণ্য পাঠানোর যা খরচ, তার চেয়ে আলাদা পণ্য-বিমান ভাড়া করে পাঠানোর খরচ কয়েক গুণ বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার, নাকি সিরাম ইনস্টিটিউট— কাদের পকেট থেকে এই বাড়তি টাকা যাচ্ছে, তা পরিষ্কার করে বলতে পারেননি পুণে বিমানবন্দরের কর্তারাও। তবে আগামী দিনে কলকাতার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা না-উঠলে এত অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সে-ক্ষেত্রে কলকাতায় প্রতিষেধক পৌঁছতে দেরি হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: উত্তর ২৪ পরগনা থেকে হুগলি, জেলায় জেলায় পৌঁছচ্ছে কোভিড টিকার ডোজ
আরও পড়ুন: শনিবার টিকা শুরু, দেখতে চান মমতা
মঙ্গলবার ই এম বাইপাসে টিকা কনভয় (বাঁ-দিকে)। কলকাতায় পৌঁছল প্রতিষেধক। ছবি: রণজিৎ নন্দী
মঙ্গলবার পুণে-কলকাতা রুটে সাধারণ যাত্রী-উড়ান না-থাকায় এ দিন আদৌ এখানে প্রতিষেধক আসবে কি না, প্রথমে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। সোমবার রাত পর্যন্ত তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলে। এক বার ঠিক হয়, আরও এক দিন দেরি করে, বুধবার সাধারণ যাত্রী-উড়ানে প্রতিষেধক পাঠানো হবে। কিন্তু দেশের অন্যত্র মঙ্গলবার প্রতিষেধক পৌঁছে গেল, অথচ কলকাতায় এল না— এই নিয়ে বিস্তর হইচই হতে পারে বলে আশঙ্কা করেই আলাদা ভাবে স্পাইসজেটের একটি যাত্রী-বিমান (বম্বার্ডিয়ার কিউ ৪০০) ভাড়া করা হয়। সেই বিমানকে পণ্য-উড়ান হিসেবে পাঠানো হয় কলকাতায়। শহরে ভ্যাকসিন নামিয়ে সেটি বাকি প্রতিষেধক নিয়ে উড়ে যায় গুয়াহাটি।
কলকাতায় এল কোভিশিল্ড
ব্যবস্থাপনা
• রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দু’টি ভ্যাকসিন ভ্যান
• স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বড় গাড়ি
• পুলিশের পাইলট কার
• ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা
• পথের সব সিগন্যালই ছিল সবুজ
মঙ্গলবার শহরে প্রবেশ
• দুপুর ১টা ৩৯ মিনিট: কলকাতা বিমানবন্দরে নামল উড়ান
• ভ্যাকসিনের বাক্স তোলা হল তিনটি গাড়িতে
• দুপুর ২টো ৪০ মিনিট: বিমানবন্দর থেকে বাগবাজারের পথে রওনা
• দুপুর ৩ টে ৫ মিনিট: বাগবাজারে কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরে প্রবেশ
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ভ্যান কোন পথে
• বিমানবন্দর - ভিআইপি রোড - সিআইটি রোড - মানিকতলা মেন রোড - চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ - বাগবাজার
• ১৪ কিলোমিটার পথ ২৫ মিনিটে
• কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের গাড়ি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সরাসরি যায় হেস্টিংসের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল স্টোর্স ডিপো (জিএমএসডি)-তে
ভ্যাকসিননামা
• বিমান থেকে নেমেছে মোট ৮৩টি বড় বাক্স
• হেস্টিংসে গিয়েছে ২৫ বাক্স
• বাগবাজারে গিয়েছে ৫৭+১ (আংশিক) বাক্স
• একটি বড় বাক্সে ১২০০ ভায়াল
• (৫৭ বাক্স x ১২০০+১ টি বাক্স x ৫০০)= ৬৮,৯০০টি ভায়াল
• ১টি ভায়াল—১০ ডোজ়
(৬৮,৯০০টি ভায়াল x ১০)= ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ডোজ়
• ১টি ভায়াল থেকে ১০ জনকে প্রতিষেধক
• ১ ডোজ়—০.৫ মিলিলিটার
• ১৬ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু
• প্রথম দিন রাজ্যের ৩৫৩টি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে ভ্যাকসিন
বিমানবন্দরের খবর, লকডাউনের পরে সারা দেশে যাত্রী-বিমান চালু হওয়ার পরে জুলাইয়ে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, আমেদাবাদ, নাগপুর ও পুণে থেকে কলকাতায় সরাসরি উড়ান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তাদের যুক্তি, ওই ছ’টি শহর থেকে যাত্রীরা কলকাতায় এসে করোনা ছড়াতে পারেন। সেই নিষেধাজ্ঞা দু’মাস বলবৎ থাকার পরে সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে তিন দিন ওই ছ’টি শহর থেকে উড়ান সরাসরি কলকাতায় আসতে পারবে বলে জানায় বাংলা। ডিসেম্বরে শুধু দিল্লির ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন দিল্লি থেকে সপ্তাহে সাত দিনই যাত্রী-উড়ান কলকাতায় যাতায়াত করছে।
কিন্তু বাকি পাঁচটি শহরের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এখনও ওঠেনি। প্রতিষেধক আনার তাগিদে সম্প্রতি মুম্বই ও পুণের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি।
এই নিয়ে বক্তব্য জানতে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের তরফে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।