কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ, ৩৭৪। ছবি: পিটিআই।
বঙ্গে এক দিনে সংক্রমণ হাজার পেরনোর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউ, আইসিইউ শয্যার অভাব মেটাতে সক্রিয় হল স্বাস্থ্য ভবন। এ ছাড়া, করোনা চিকিৎসার প্রোটোকল লঙ্ঘন করার অভিযোগে বারাসতের জিএনআরসি’র পরে কেপিসি হাসপাতালকে শো-কজ় করেছে স্বাস্থ্য ভবন।
এ দিন রাজ্যে এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১১৯৮! গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ, ৩৭৪। উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬৪ থেকে এক লাফে এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৮। পরের তিনটি জেলা হল কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১০৪), হাওড়া (১৩০) এবং হুগলি(৭১)। প্রসঙ্গত, কলকাতায় এ দিন কন্টেনমেন্ট জ়োন ২৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮টি। ফুলবাগানের রামকৃষ্ণ সমাধি রোডে একাধিক বাড়ি, গড়িয়াহাটে গরচা রোডে একাধিক বাড়ি, বালিগঞ্জে প্রাণনাথ পণ্ডিত রোডে একটি বাড়ি, ভবানীপুরে বকুলবাগান রো-এ একটি বাড়ি এবং মানিকতলা মেন রোডে একটি বাড়ি এবং সিআইটি রোড, স্কিম ৭-এ একাধিক বাড়িকে কন্টেনমেন্ট করা হয়েছে। বাদ গিয়েছে মতিলাল বসাক লেন , সত্যম টাওয়ার, আরিফ রোড।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে একটি অডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড প্রায় নেই। বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজার সময় এসে গিয়েছে। কোভিড আক্রান্ত এক জনও যাতে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।’ একই সঙ্গে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম না করে তিনি জানান, ওই হাসপাতাল এতটা উদাসীন যে এখনও পর্যন্ত তারা কতগুলি কোভিড শয্যা রয়েছে তা জানায়নি। চেয়ারম্যান বলেন, ‘এত দিনে এক জন কোভিড রোগীরও ওই হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে কি না সন্দেহ রয়েছে। আপনাদের উপরে আমাদের নজরে রয়েছে। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: টেস্টের অনুপাতে কোভিড পজিটিভ কেস লাফিয়ে বাড়ছে, উদ্বেগের ছবি রাজ্যে
স্বাস্থ্য কমিশনের এই অডিয়ো বার্তার পরে এ দিন বিকেলে শহরের প্রায় সবক’টি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের এক সচিব ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে বৈঠক করেন। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ-সিসিইউ শয্যা বাড়ানোর নির্দেশের পাশাপাশি রোগীদের দ্রুত ছাড়ার জন্য (আর্লি ডিসচার্জ পলিসি) বলেছে স্বাস্থ্য ভবন। যা নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্কও তৈরি হয়েছে। ভিডিয়ো কনফারেন্সে উপস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের একাংশ জানান, শয্যার অভাব মেটাতে যে সকল রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখলেই হবে, তাঁদের জন্য ‘স্যাটেলাইট ফেসিলিটি সেন্টার’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৃদু উপসর্গ যুক্ত এবং উপসর্গহীনেরা যাতে হাসপাতালের শয্যা আটকে না রাখেন তার জন্য ‘হোম কেয়ার প্যাকেজ’এ জোর দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চার বছরের মধ্যে কমবে কি ভাসমান ধূলিকণা
তবে এ দিনের বৈঠকে গুরুত্ব ছিল শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির উপরে। বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র সূত্রের খবর, স্বভূমি সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিকে বলা হয়, ৭০০ শয্যার হাসপাতালে করোনার চিকিৎসার জন্য মাত্র ৪০ শয্যা কেন? ওই প্রতিনিধি তখন জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে শয্যা সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ করেছেন। স্যাটেলাইট সেন্টারে পৃথকভাবে ৪০টি শয্যা রয়েছে। পরে ওই হাসপাতালের এক কর্ণধার জানান, ইতিমধ্যে তাঁদের হাসপাতালে ১০০-র বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠীকে তাদের মুকুন্দপুরের প্রতিষ্ঠানে কেন শুধু আইসোলেশন বেড রয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে, ওই গোষ্ঠীর এক কর্তাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শয্যার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ওই গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়, মুকুন্দপুরে কোভিড পজ়িটিভ রোগীদের জন্য ১৪ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকুরিয়ায় একটি অ্যানেক্স বিল্ডিং কোভিডের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তাতে আরও ৫০ শয্যা পাওয়া যাবে।
মুকুন্দপুরের আর একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা জানতে চান, তাঁদের তিনটি ভবন থাকা সত্ত্বেও একটি কেন কোভিডের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে না? ওই হাসপাতালের কর্ণধার জানান, দু’তিনদিনের মধ্যে কোভিড পজ়িটিভ বেডের সংখ্যা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করা হবে।
শয্যা বৃদ্ধি এবং রোগীদের দ্রুত ছুটি করা নিয়ে সরকারি কোভিড হাসপাতালেও বার্তা গিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিবি বিল্ডিংয়ে ১০০ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। সুপার স্পেশালিটি ব্লকের চারতলায় পাঁচটি ভেন্টিলেটর বেড এবং ৩০টি হাই-ফ্লো অক্সিজেন বেড করার প্রস্তুতি চলছে। গ্রিন ব্লিডিংয়ে কোভিড বেডের সংখ্যা ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে।’’ তবে বেলেঘাটা আইডি’র অধ্যক্ষা অণিমা হালদার বলেন, ‘‘বেড খালি হওয়া মাত্র ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত যেতে চাইছেন না, সেটাও সমস্যা।’’