প্রতীকী ছবি।
আশায় জল ঢেলেছে আইসিএমআরের গবেষণাপত্র। তবুও করোনা রোগীর চিকিৎসায় ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’র সম্ভাবনা নিয়ে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ বঙ্গের গবেষণা।
অচেনা শত্রু কোভিড-১৯-এর হানায় মৃত্যু ঠেকাতে ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ প্রয়োগে সুফল কতখানি, তা খতিয়ে দেখতে এপ্রিলে গবেষণার কাজ শুরু করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। মঙ্গলবার ‘মেড আর্কাইভে’ প্রকাশিত আইসিএমআরের গবেষণাপত্রে বক্তব্য হল, করোনা রোগীর মৃত্যু ঠেকানো বা গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর অসুখের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ (সিপি) সহায়ক নয়।
সারা দেশে ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণার জন্য বেছেছিল কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা। সারা দেশে মোট ৪৬৪ জন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শরিক হন। ৪৬৪ জনের মধ্যে ২৩৫ জনের দেহে ‘ইন্টারভেনশন’ (এ ক্ষেত্রে প্লাজমা) প্রয়োগ করা হয়েছিল। আর ট্রায়ালের পরিভাষায় ‘কন্ট্রোল আর্ম’ অর্থাৎ যাঁদের প্লাজমা দেওয়া হয়নি, সেই সংখ্যা হল ২২৯ জন। গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ইন্টারভেনশন এবং কন্ট্রোল আর্মের মধ্যে মৃত্যুর হার যথাক্রমে ১৩.৬ এবং ১৪.৬ শতাংশ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে। একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যে প্লাজমাথেরাপি ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। এ রাজ্যে কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সংস্থার গবেষণাপত্রের বক্তব্যে আশাহত হওয়ার কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
আইসিএমআরের গবেষণার সূচনাকালে এ রাজ্যেও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির (আইআইসিবি) সঙ্গে রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যের গবেষণায় প্লাজমা প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএইচবিটি) বিভাগ। করোনা রোগীর দেহে প্লাজমা দেওয়ার বিষয়টি ঘটনাটি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আইএইচবিটি’র বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বুধবার জানান, প্রতিটি ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এর নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটি গবেষণার ফল দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘প্লাজমাথেরাপির ক্ষেত্রে কাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে, কখন দেওয়া হচ্ছে, কী শারীরিক পরিস্থিতিতে দেওয়া হচ্ছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গায় কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থাকে আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হত বলে মনে হয়। তা ছাড়া আইসিএমআরের গবেষণা সারা দেশের ৩৯টি গবেষণাকেন্দ্রে হয়েছে। এতগুলি গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে প্লাজমাথেরাপির সাযুজ্য রক্ষা করা মুশকিল। আমাদের ট্রায়ালে এতখানি নেতিবাচক ফল মিলবে বলে মনে হয় না।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এ রাজ্যে ইন্টারভেনশন এবং কন্ট্রোল আর্ম হলেন ৪০ জন করে মোট ৮০ জন। এর আগে গবেষণার প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এবং প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর তথা আইআইসিবি’র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁদের গবেষণা শুধু প্লাজমা থেরাপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গ্রহীতার ইমিউন সিস্টেমের নানা কোষের সংখ্যা, তাদের কর্মক্ষমতা, দেহে নানা জৈব রাসায়নিকের পরিমাণ দেখার পাশাপাশি ভাইরাসের সিকুয়েন্সও করা হবে। প্লাজমা থেরাপি সকলের ক্ষেত্রে কেন কার্যকর হল না দেখতেই সেটি করা হবে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের গবেষণায় এখনও পর্যন্ত ২৮ জন করে মোট ৫৬ জন ইন্টারভেনশন এবং কন্ট্রোল আর্মের দেহে প্লাজমা প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগিরাজ রায় বলেন, ‘‘আইসিএমআরের ট্রায়ালে সকলে মরে গিয়েছেন তা তো নয়! কাকে প্লাজমা দেওয়া হবে সে বিষয়ে আমরা খুব কড়া অবস্থান নিয়ে চলেছি। আমাদের ট্রায়ালে প্লাজমা দেওয়ার আগে এবং পরে রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতেও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোনও গবেষণাতেই প্রাপ্তির ঝুলি কখনও শূন্য হয় না!’’
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)