নেই হুঁশ: করোনা সংক্রমণ নিয়ে সচেতনতা প্রচার বাসের গায়ে। কিন্তু ঠিক ভাবে মাস্ক পরেননি কন্ডাক্টর নিজেই! শুক্রবার হাওড়ায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতি দিনই রেকর্ড গড়ছে উত্তর ২৪ পরগনা। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৯৪! এক দিনে আক্রান্তের মাপকাঠিতে প্রায় ১৯০০-র গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলার দিন উত্তর ২৪ পরগনায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা হল ৪৪৩!
এরই মধ্যে আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমিউনিটি মেডিসিনের প্রবীণ চিকিৎসক সন্দীপ রায়ের (৭৫) এ দিন মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনের আধিকারিক এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেক চিকিৎসকেরই ‘স্যর’ সন্দীপবাবু। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অবসর নেন তিনি। ১২ দিন ধরে আইডি হাসপাতালের সিসিইউয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রবীণ চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কোভিডের পাশাপাশি রক্তচাপ, ডায়াবিটিস এবং হৃদ্রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এ ছাড়া কিডনির সমস্যা থাকার জন্য ডায়ালিসিসও চলছিল বলে জানান চিকিৎসকেরা।
এ দিনের পরিসংখ্যানে রাজ্যের সব জেলার মধ্যে শীর্ষে থাকার ধারা অব্যাহত রেখেছে কলকাতা (৫৬৩)। তবে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির প্রশ্নে উত্তর ২৪ পরগনার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি করেছে বলে খবর। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত ৪ জুলাই থেকে উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যার ঊর্ধ্বমুখী গতি। জুলাইয়ের আট তারিখ ওই জেলায় এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। মাত্র ন’দিনের ব্যবধানে ঘন জনবসতিপূর্ণ জেলায় তা দ্বিগুণ হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, অগস্টে উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। যার প্রেক্ষিতে উপসর্গহীন, মৃদু উপসর্গযুক্ত আক্রান্তদের ‘সেফ হোমে’ রেখে হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ভর্তি করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন।
কোভিড হাসপাতালগুলিতে কী ধরনের রোগী ভর্তি হচ্ছেন তার উপরে নজরদারি চালাতে তথ্যপঞ্জি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই নির্দেশে প্রতি দিন ভর্তি হওয়া সবক’টি রোগীর তথ্য নথিভুক্ত নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। রোগীদের কী উপসর্গ রয়েছে, কো-মর্বিডিটি আছে কি না, চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য, কত জনের মৃত্যু হল, কত জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন, সব ক’টি বিষয়ে তথ্য নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে। এর ফলে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা এবং কী ধরনের রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তার উপরে নজরদারির প্রক্রিয়া আরও সুদৃঢ় হবে বলে মত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের।