Coronavirus

সঙ্ঘাত তো শেষ কালই, আজও কেন ঘরে বসে কেন্দ্রীয় দল?

প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের তরফে সাহায্যের সমস্ত আশ্বাস দেওয়ার পরেও কেন নিজেদের কাজে নামল না ওই প্রতিনিধি দল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৪
Share:

বিএসএফের দফতরের বাইরে অপেক্ষায় পাইলট কার। নিজস্ব চিত্র

কেন্দ্রীয় দলের রাজ্যে আসা নিয়ে এত ঢাকঢোল বাজল, কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খাজনার ব্যাপারে কিছুই হল না। কারণ, কাজের কাজ কিছুই শুরু হয়নি এখনও।

Advertisement

করোনা-আবহে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার দুপুরেই এ রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় দল। কিন্তু বুধবার রাত গড়িয়ে গেলেও ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা কার্যত বাইরে বেরলেন না। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের তরফে সাহায্যের সমস্ত আশ্বাস দেওয়ার পরেও কেন নিজেদের কাজে নামল না ওই প্রতিনিধি দল?

কলকাতায় যে দলটি রয়েছে, মঙ্গলবার কিছু ক্ষণের জন্য যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকায় ঘুরেছে বটে, কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গে যাওয়া দলটি শিলিগুড়িতে এসএসবি-র গেস্ট হাউসে রয়েছে। দুই দলের কোনও প্রতিনিধিকেই বুধবার রাত পর্যন্ত বাইরে বেরতে দেখা যায়নি।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ওই দল পাঠানো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি শুরু হয়েছিল সোমবার থেকেই। রাজ্যের তরফে বলা হয়, আগে থেকে কোনও কিছু না জানিয়েই কেন্দ্রীয় দল এখানে এসেছে। এমনকি দলটি রাজ্যের দু’টি জায়গায় পৌঁছনোর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে রাজ্যকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। যে ভাবে ওই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সৌজন্য ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব একটি চিঠি পাঠান রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। কলকাতায় যে কেন্দ্রীয় দলটি রয়েছে, তার প্রধান রাজ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। এর পর জবাবি চিঠিতে মুখ্যসচিবের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে জানানো হয়, রাজ্য সব বিষয়েই সহযোগিতা করবে। যদিও তার আগে দু’বার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকও হয় ওই দলের। প্রথম বার নবান্নে, সোমবার। দ্বিতীয় বার, মঙ্গলবার গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে, যেখানে কলকাতার প্রতিনিধিদলটি রয়েছে।

আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ, বাদুড়িয়ায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, মাথা ফাটল পুলিশের

এ দিন গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে পৌঁছয় স্থানীয় বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। কলকাতা না জেলা, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোথায় যেতে চান, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েক প্রস্থ কথাও হয়। বালিগঞ্জ থানার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রতিনিধি দল যেখানেই যাবে সেখানেই সমস্ত ব্যবস্থা করবে পুলিশ-প্রশাসন। ওই সফরের রূপরেখা নিয়ে বালিগঞ্জ থানার ওসি-সহ অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও হয়। কিন্তু, এর পরেও বিএসএফের ওই দফতর থেকে এ দিন রাত পর্যন্ত নড়েনি কেন্দ্রীয় দল। ওই দলের কী পরিকল্পনা, তা নিয়ে স্থানীয় থানার কাছে স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই। বিএসএফের ওই দফতরের বাইরে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। রয়েছে পাইলট কারও। এমনকি বিএসএফের তরফেও পাইলট কার-সহ মোট তিনটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা কোথায় যাবেন? শুধুমাত্র কলকাতাতেই, নাকি শহরের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁরা পরিদর্শন করবেন হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা বা পূর্ব মেদিনীপুরে? এ সব প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয়েছে, আদৌ তাঁরা বেরোবেন তো? এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকেও কিছু বলেননি ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। বালিগঞ্জ থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আদৌ ওঁরা আজ বেরোবেন কি না, তা বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা প্রস্তুত আছি।’’

আরও পড়ুন: ‘বাঙুরে শয্যায় পড়ে মৃতদেহ’, ভিডিয়ো-বিতর্ক

অন্য দিকে উত্তরবঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় দলটি এ দিন শিলিগুড়ির রানিডাঙায় সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে জলপাইগুড়ি ডিভিশনের কমিশনার অজিতরঞ্জন বর্ধনের সঙ্গে বৈঠক করে। বিনীত জোশীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ওই দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘আমরা ডিভিশনাল কমিশনারের কাছ থেকে এই গোটা এলাকায় কতগুলো কোভিড হাসপাতাল, সেগুলো কোথায় কোথায়, সে সংক্রান্ত তথ্য জেনেছি। কোথায় কত জন আক্রান্ত, কোথায় কোথায় কোয়রান্টিন সেন্টার রয়েছে সে বিষয়েও সবিস্তার তথ্য সংগ্রহ করেছি। কালিম্পং এবং দার্জিলিঙে বাজার-দোকানে কি সামাজিক দূরত্ব বিধি মানার ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম লাগু হয়েছে তারও তথ্য পেয়েছি। ডিভিশনাল কমিশনার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।” ওই দলটির তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সমস্ত তথ্য একত্রিত করে তারা আগামিকাল বৃহস্পতিবার এলাকা পরিদর্শনে যাবে।

কেন্দ্রীয় দল প্রসঙ্গে এ দিন নবান্নে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘ জলপাইগুড়ির দলের সঙ্গে দেখা করছেন আমাদের ডিভিশনাল কমিশনার। তাঁর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। যা যা তথ্য ওঁরা চেয়েছিলেন তা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কোথাও যেতে চাইলে যাবেন। আমরা শুধু বলেছি সমস্ত রকম সতর্কতা এবং সুরক্ষা নিয়ে যেতে। আমরা তো তাঁদের ঘুরতে বারণ করিনি। যদি ঘুরতে চান, ঘুরুন। কলকাতার বাইরে যেতে চাইলে, আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা করে দেব।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement