গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শনিবারের তুলনায় রবিবার কিছুটা কমল রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত কাল নতুন করে সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪০৪ জন। গত কালকের চেয়ে এ দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছে অনেকটা বেশি। কিন্তু নতুন আক্রান্তের সংখ্যা শনিবারের থেকে কমে হয়েছে ২ হাজার ৩৪১ জন।
এ দিনের ফলাফল কিছুটা স্বস্তিদায়ক বলেই অনেকে মনে করছেন। যদিও, করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি। এই পরিসংখ্যানের পাশাপাশি আশার আলো দেখাচ্ছে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও। এ দিন ২ হাজার ৯৭ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। এ নিয়ে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা হল ১ হাজার ৩৭২ জন।
শনিবার কলকাতায় নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৭২৭ জনের। রবিবার সেই সংখ্যাটা খানিকটা নেমেছে। এ দিন মহানগরীতে নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে ৬৪৮ জনের। কিন্তু এ দিন রাজ্যে মৃত ৪০ জনের মধ্যে ১৭ জনই কলকাতার বাসিন্দা। ফলে ওই শহরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গিয়েছে। এ দিনের সংখ্যা ধরে কলকাতায় মোট করোনা আক্রান্ত এখন ১৮ হাজার ২০১।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কলকাতার পাশাপাশি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দুই ২৪ পরগনা, হাও়ড়া, হুগলির করোনা পরিস্থিতি নিয়েও। উত্তর ২৪ পরগনায় এ দিন ৫৪২, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৩৩, হাওড়ায় ২৯১ এবং হুগলিতে ১২৭ জনের নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত ৫ এবং হাওড়ায় মৃত ৯। পূর্ব মেদিনীপুরে ৩৭ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৪ জনের নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে। পূর্ব বর্ধমানে ৪৫ এবং পশ্চিম বর্ধমানে ১৬ জন নতুন করে আক্রান্ত। বাঁকুড়ায় ৩৯, নদিয়ায়৬৪ এবং মুর্শিদাবাদে ২৭ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত। এ দিন দার্জিলিঙে ১২৩, আলিপুরদুয়ারে ২৩, জলপাইগুড়িতে ৬, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৩৭ এবং মালদহে ৩৬ জনের করোনা ধরা প়ড়েছে। উত্তরবঙ্গে এ দিন করোনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিদিন কত জন রোগীর করোনা টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে কত জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে আগের থেকে বেশি। তা সত্ত্বেও নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে কম। গত শুক্রবার থেকে এমনই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শনিবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৬২৮ জনের। তাতে কোভিড ১৯ আক্রান্ত ধরা পড়েছিল ২ হাজার ৪০৪ জন। ওই দিন সংক্রমণের হার ছিল ১৫.৩৮ শতাংশ। রবিবার অবশ্য তা কয়েক ধাপ নেমে হয়েছে ১৪.৫৯ শতাংশ। এ দিন ১৬ হাজার ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ২ হাজার ৩৪১ জন।
রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫৬ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৭৫১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ দিনই হাসপাতাল থেকে ছা্ড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৯৭ জন, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ দিন সুস্থতার হার বেশ কয়েক ধাপ বেড়ে হয়েছে ৬৪.২৯ শতাশ।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)