আক্রান্ত দু’জনকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্স।
এগরায় বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে বৃদ্ধর করোনা যোগে আক্রান্ত দুই আত্মীয়কে রবিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হল। এ দিন কঠোর নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসন এবং তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম আক্রান্তদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় রওনা হন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর গত ১৫ মার্চ এগরায় এক চিকিৎসকের ছেলের বৌভাতের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের প্রবাসীরা। অনুষ্ঠানে ছিলেন চিকিৎসকের ভায়েরা কলকাতার এক বৃদ্ধ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে কলকাতার বৃদ্ধ করোনা সংক্রমিত হন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। বৃদ্ধের সংক্রমণ থেকে এগরার ওই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের স্ত্রী এবং তার পিসিমা করোনায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসক-সহ বাকি এগারো জনের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও এখনো এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছে তাঁরা।
রবিবার সন্ধ্যায় করোনা রিপোর্ট আসার পরে আক্রান্ত সাতান্ন বছরের ওই প্রৌঢ়া এবং ছিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধাকে হাসপাতালে রাখতে সাহস পায়নি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শনিবারের রাতে বৃদ্ধার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ভাল চিকিৎসার জন্য দু’জনকেই রবিবার সকালে কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
তবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এগরা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ হওয়ার ঘটনায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়রান্টিনে থাকা বিদেশ ও ভিন রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য জেলার সব বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছে জেলাপ্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সূত্রে খবর, এগরায় চিকিৎসক পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমেরিকা, সিঙ্গাপুর থেকে আসা আত্মীয়-বন্ধুরা ছিলেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কয়েকজন অতিথিও ছিলেন। এ ছাড়া এগরা শহরের কয়েকশো ও কাঁথির কয়েকজন ছিলেন। বিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন চিকিৎসকের আত্মীয় কলকাতার বাসিন্দা বৃদ্ধ। ওই বৃদ্ধ-সহ তিনজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বিয়েতে যোগ দেওয়া অন্যান্য আমন্ত্রিতদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। হোম কোয়রান্টিনে থাকা ওই ব্যক্তিদের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
শনিবার এগরার বিয়েবাড়ি যোগে আরও দু’জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে আসায় জেলার অন্যান্য এলাকায় হোম কোয়রান্টিনে থাকা বিদেশ এবং ভিন রাজ্য থেকে আসা সকলের শারীরিক পরস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। শারীরিক অবস্থার এই রিপোর্ট জেলাশাসক ও জেলাস্বাস্থ্য দফতরকে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
তবে কিছু এলাকায় ভিনরাজ্য বা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে আনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। ফলে ভিনরাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের একাংশ জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে আসছেন। এতে উদ্বিগ্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা। তমলুক জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক কর্মী বলেন, ‘‘ভিন রাজ্য থেকে আসার পর হোম কোয়রান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের একাংশ শারীরিক পরীক্ষা করাতে আসছেন। হোম কোয়ারান্টিনে থাকা ব্যক্তিরা এভাবে বাড়ির বাইরে আসায় আমরা উদ্বিগ্ন।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, এগরায় বিয়ে বাড়ির কাণ্ডে যোগ রয়েছে এমন ৫৭২ জনের সোমবার এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।