প্রতীকী ছবি।
জেলায় আরও দুই করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে বলে ফেসবুকে ভিডিয়ো পোস্ট করে জানিয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আক্রান্তদের একজনের বাড়ি তেহট্টের দত্তপাড়ায়, অপর জন থানারপাড়ার বাসিন্দা। রবিবার রাতে নতুন করে দু’জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন জেলাশাসক বিভু গোয়েলও।
ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিও-তে মহুয়া বলেন, ‘‘দু’জন পজিটিভ হয়েছেন। একজন কেরল ফেরত, থানারপাড়ার বাসিন্দা। অপরজন তেহট্টের বাসিন্দা। ফেরার পর হোম কোয়রান্টিনে ছিলেন। কিন্তু এক জনের পরিবারের সদস্যরা রাস্তায় ঘুরেছেন। এই অবস্থায় আমরা পরিবারের সদস্যদেরও হাসপাতালে টেস্ট করার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, পরিবারের সদস্যরা পজিটিভ হলে তাঁদের থেকে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, তাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। এই অবস্থায় ঘরে ফেরা শ্রমিকদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারকেও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাংসদ।
পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তা বাড়িয়েছে উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তাই এবার শুধু করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তি নয়, করোনা মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত অথচ উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তিদেরও লালারস পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো শনিবার জেলার একশো জন চিকিৎসক, নার্স, চতু্র্থ শ্রেণির কর্মী, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি করোনা সন্দেহভাজন নন, কিন্তু অন্য রোগে আক্রান্তদেরও বেশি করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা হাসপাতাল-সহ জেলার অন্য হাসপাতালে ভর্তি ১০০ জন রোগী, যাঁদের কোনও রকম করোনার লক্ষণ নেই, তাঁদেরও লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “এখন গোষ্ঠী সংক্রমণের সময়। এমন অনেক করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, যাদের শরীরে কোনও লক্ষণই নেই।” তিনি জানান, এটা করা হচ্ছে, যাতে গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
করোনা চিত্র
• আইসোলেশন ওয়ার্ড ৯টি।
• মোট শয্যা সংখ্যা ৩৩৮টি।
• জেলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ৮৭১ জন।
• ছাড়া হয়েছে ৭৭৮ জনকে।
• রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত নতুন করে ভর্তি ১১৪ জন।
• ভর্তি আছেন ৯৩ জন।
• নমুনা সংগ্রহ ১৮০২ জনের।
• রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত নতুন করে নমুনা সংগ্রহ ১৩৭ জনের।
• রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে ৯১৭ জনের।
• রিপোর্ট পজ়িটিভ ১২ জনের।
তথ্যসূত্র: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর
জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “যেহেতু চিকিৎসক, নার্স, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সরাসরি করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসার সম্ভবনা প্রবল, তাই তাঁদেরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি।” তবে এ সবের পাশাপাপাশি জেলার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বিভ্রান্তি এখনও কাটেনি। কারণ, শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত যেখানে ১৪ জন আক্রান্তের কথা বলা হলেও রবিবার সেই সংখ্যাই কমে দাঁড়িয়েছে ১২-তে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে চাকদহের বাসিন্দা কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানকে এবং চাপড়ার চারাতলার বাসিন্দা খিদিরপুর বন্দরের কর্মীকে। তাঁদের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে আবার কেন বাদ দেওয়া হল? জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, ওই দুই ব্যক্তি জেলায় আক্রান্ত হননি, তাই তালিকা থেকে ফের বাদ দেওয়া হয়েছে। এক কর্তা বলেন, “রাজ্য থেকে এই নাম দুটো আমাদের জেলার তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে তাঁরা আমাদের জেলায় সংক্রমিত হননি আবার তাঁদের চিকিৎসাও আমাদের জেলাতে হয়নি।” এরই মধ্যে, আজ, সোমবার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন আসবে কৃষ্ণনগর স্টেশনে। প্রায় ১২০০ যাত্রী নিয়ে ট্রিনটি আসছে হরিদ্বার থেকে। কৃষ্ণনগর স্টেশনে তাঁদের পরীক্ষা করে তারপর বাসে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।