আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাইরে চিকিৎসকরা। —ফাইল চিত্র
রাজ্যের প্রথম দুই করোনা আক্রান্ত যুবকের ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগও। কিন্তু উল্টো দাবিই করছেন স্কটল্যান্ডফেরত রাজ্যের তৃতীয় করোনা আক্রান্ত তরুণীর পরিবার। তাঁদের দাবি, এ দেশে পা রাখার মুহূর্ত থেকে প্রতি পদে ওই তরুণী সব নিয়ম মেনে চলেছিলেন। বিমানবন্দর থেকেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। তা সত্ত্বেও তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ওই তরুণীর পরিবার।
গত ১৯ মার্চ দেশে ফিরেছেন ওই তরুণী। বিমানবন্দর থেকে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন ওই তরুণী? সে দিন তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেছে পরিবার। তাদের দাবি, বিমানবন্দর থেকে সোজা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তখনও তাঁর শরীরে কোনও ধরনের করোনার উপসর্গ দেখা দেয়নি।
ওই তরুণীর পরিবার আরও জানিয়েছে, তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার অব বিজনেসের ছাত্রী। স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে করোনার প্রাদুর্ভাবের পরেই তিনি দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এডিনবরা থেকে সরাসরি দেশে ফেরার বিমান তিনি পাচ্ছিলেন না। তাই প্রথমে এডিনবরা থেকে লন্ডনে আসেন। তার পর সেখান থেকে গত ১৮ মার্চ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান বিএ-১৩৫ ফ্লাইটে চাপেন। ওই বিমানটি লাহৌর হয়ে গত ১৯ মার্চ মুম্বই পৌঁছয়।
আরও পড়ুন: ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত
ওই বিমানে তাঁর সিট নম্বর ছিল ২১-ডি। মুম্বই থেকে ইন্ডিগোর ৬-ই ৬৭৪৯ বিমানে চড়ে ওই দিন দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন। তাতে তাঁর সিট নম্বর ছিল ২৮-ই। বিমানবন্দরে ওই তরুণীকে নিতে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। আক্রান্ত তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে তিনি পাশ করে যান। সেখান থেকে অবশ্য তাঁকে হোম আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তত ক্ষণে তিনি জানতে পেরে গিয়েছেন যে, ইংল্যান্ড ফেরত এ রাজ্যেরই এক যুবক ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই হোম আইসোলেশনে যাওয়ার আগে ওই দিন দুপুরেই তিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যান নিজেকে পরীক্ষা করানোর জন্য।
তাঁর পারিবারিক বন্ধু রাহুল মিত্রের কথায়, ‘‘ওই দিন প্রায় ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর তাঁর প্রাথমিক স্ক্রিনিং হয়। এবং চিকিৎসক তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে থাকার নির্দেশ দেন। তখন থেকেই তিনি ওই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেই রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য। পাঠানো হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে তৃতীয় করোনা আক্রান্ত স্কটল্যান্ডফেরত হাবড়ার তরুণী
ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, সমস্ত নিয়ম মানার পরেও, গুজবের জেরে তাঁদের হেনস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় ওই তরুণীর বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে হাবড়া থানার পুলিশ ওই তরুণীর গোটা পরিবার এক বন্ধুকেও কোয়রান্টিনে পাঠানোর চেষ্টা করছে। পরিবারের কথায়, তরুণীর বাবাও বেলেঘাটা আইডি-তে মেয়েকে ভর্তি করে ফিরে নিজের বাড়িতে ফেরেননি। অন্য একটি বাড়িতে একা থেকেছেন। তার পরেও, তাঁদের পরিবারকে স্রেফ গুজবের জেরে হেনস্থা করছে কিছু স্থানীয় মানুষ। করোনা ধরা পড়ার পর, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই ওই তরুণীর বিমান যাত্রা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য মুম্বই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সে দিন ওই বিমানে তরুণীর আশপাশে থাকা যাত্রী ও বিমানবন্দর কর্মীদের চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা চলছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, তরুণীর বাবা যে হেতু সরাসরি সংস্পর্শে ছিলেন, তাই তাঁর বাবাকে কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘স্থানীয় কিছু মানুষ দাবি করেছেন, ওই তরুণীর এক বন্ধুও তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। সেই দাবি কতটা সঠিক তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘গুজবের জেরে যাতে কেউ হেনস্থা না হন, তা নিশ্চিত করবে পুলিশ।’’ ওই তরুণীর পরিবারে তাঁর বাবা, মা ছাড়াও রয়েছেন ছোট ভাই, তিনি মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী বলে জানা গিয়েছে।