বিদেশফেরতদের উদ্দেশে বার্তা মমতার। —ফাইল চিত্র।
এ বার থেকে বিদেশফেরত সকলকেই বাধ্যতামূলক ভাবে ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে যেতে হবে। নইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখতে বাধ্য হবে রাজ্য প্রশাসন। শুক্রবার বিবৃতি প্রকাশ করে এমনটাই সাফ জানিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ। যদিও তার আগে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই নির্দেশ জারি করেন।
এক সপ্তাহ আগে পর্যন্তও নিশ্চিন্তে ছিলেন শহর কলকাতার বাসিন্দারা। দেশের অন্য প্রান্তে নোভেল করোনানোভেল করোনার প্রকোপ দেখা দিলেও, বাংলায় তার আঁচ পড়েনি। কিন্তু গত পাঁচ-ছ’দিনে দুই বিদেশফেরত তরুণের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা পড়ায় একধাক্কায় ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। উদ্বেগ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সেই প্রেক্ষিতে শুক্রবার নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, বিদেশফেরত সকলকে স্বেচ্ছায় কোয়রান্টিনে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরে কলকাতা পুলিশের তরফে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যে দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা বিদেশে সংক্রমিত হন। সেই অবস্থাতেই কলকাতায় ফেরেন। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হচ্ছে, সম্প্রতি যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরেছেন, বিশেষত ব্রিটেন, আমেরিকা, ইউরোপ এবং উপসাগরীয় দেশ থেকে যাঁরা এসেছেন, ১৪ দিন পর্যন্ত গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকুন। কারণ কোভিড-১৯ ঠেকানোর একমাত্র উপায়ই হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। যে বা যাঁরা এই নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মহামারি আইন অনুযায়ী তাঁদেররাজ্য প্রশাসন কোয়রান্টিনে রাখতে বাধ্য হবে।’’
কলকাতা পুলিশের টুইট।
আরও পড়ুন: জয়পুরে ইটালীয়ের মৃত্যু, আক্রান্ত বেড়ে ১৯৬, লকডাউন মুম্বই, নাগপুরে: করোনা আপডেট এক নজরে
এরই পাশাপাশি শুক্রবার ফের এক বার রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, করোনা আক্রান্ত হলেই ভয় পেতে হবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে সকলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এ দিন নবান্নে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘‘করোনায় আক্রান্ত হলেই ভয় পাবেন না। বরং উপযুক্ত চিকিৎসা করান। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলেই সুস্থ হয়ে যাবেন।’’ রাজ্যবাসীর সুবিধার্থে আপৎকালীন ত্রাণ তহবিল খোলা হচ্ছে বলেও এ দিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জরুরি পরিস্থিতিতে এই তহবিল ব্যবহার করা হবে। এর পাশাপাশি, এই বিপদের দিনে ওই তহবিলে অনুদান করতেও সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান তিনি।
নোভেল করোনা নিয়ে আতঙ্কের জেরে সরকারি কর্মীদের কাজের সময় আগেই ১ ঘণ্টা কমিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও কর্মীদের হাজিরা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সংস্থার ৫০ শতাংশ কর্মীদের অদলবদল করে কাজ চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের যে সমস্ত মানুষ এত দিন ২ টাকা কেজি দরে চাল পেতেন, এখন থেকে আগামী ছ’মাসের জন্য তাঁরা সেই চাল বিনামূল্যে পাবেন। আক্রান্তদের সেবায় যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন, পুজোর পর তাঁদের ‘স্পেশাল লিভ’ দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলার উপায় আগামী ১৫ দিন বাড়িতে থাকা
নোভেল করোনার প্রকোপ রুখতে ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ‘জনতা কার্ফু’-র ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রের তরফে তাঁর সরকার কোনও সাহায্যই পাচ্ছে না বলে এ দিন দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সে ব্যাপারে কোনও সাহায্যই করা হচ্ছে না। অবিলম্বে কলকাতা বিমানবন্দরে সমস্ত বিদেশি বিমানের নামা বন্ধ করতে হবে বলেও কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানান তিনি।