Quarantine

কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হচ্ছে রাজারহাটে

করোনা প্রভাবিত সাতটি দেশ থেকে আগতদের কী ভাবে কোয়ারেন্টাইন করে রাখতে হবে, সেই সংক্রান্ত শুক্রবার একটি নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০৪:২৭
Share:

হাসপাতাল-সামগ্রী নামানো হচ্ছে রাজারহাটে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে। বারাসত জেলা হাসপাতালের বদলে এখানেই রাজ্যের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হচ্ছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নির্দেশিকা মেনে করোনা-কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র বদল করল রাজ্য। বারাসত জেলা হাসপাতালের পরিবর্তে রাজারহাটে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসকে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে শনিবার জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

করোনা প্রভাবিত সাতটি দেশ থেকে আগতদের কী ভাবে কোয়ারেন্টাইন করে রাখতে হবে, সেই সংক্রান্ত শুক্রবার একটি নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ষাটোর্ধ্ব এবং ডায়াবিটিক, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিতে আক্রান্তদের করোনা লক্ষণ না-থাকলেও ১৪ দিনের জন্য শহর থেকে দূরে ফাঁকা এলাকায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার দু’জন যাত্রীকে ওই নির্দেশিকা মেনে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে বলে জানা যায়। যার প্রেক্ষিতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বারাসত জেলা হাসপাতালের ক্যান্টিনের কাছে যে নতুন ভবন তৈরি হয়েছে, তার একতলা ও দোতলায় ২৪ জনকে রাখার ব্যবস্থা হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র শহরের বাইরে জনবসতি নেই, এমন জায়গায় হতে হবে। পাশাপাশি, প্রত্যেকের জন্য পৃথক শৌচালয়, খাবার জায়গা, জামকাপড় ধোওয়ার ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামোগত বেশ কিছু শর্তপূরণের কথা বলা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিকল্প কেন্দ্রের খোঁজে নেমে পড়ে রাজ্য সরকার। তখনই বিকল্প হিসাবে সিএনসিআইয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কথা ভাবা হয়।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজারহাটে ক্যানসার হাসপাতালে ২০০-৩০০ জনকে রাখার মতো ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া রাজারহাটের শেষ প্রান্তে একটা বড় বাড়ি আছে। ওটা পেয়ে গেলে সেখানে আরও ৪০০-৫০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন করার ব্যবস্থা করছি।’’

Advertisement

বারাসত জেলা হাসপাতালে যে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। এক সময় আমডাঙার নাম বিকল্প হিসাবে শোনা যায়। কিন্তু সেই ভাবনাও বাতিল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরভোটের জন্য বারাসতের জেলা হাসপাতালের নামে সায় ছিল না স্থানীয় নেতৃত্বের। বিকেলে রাজারহাটের ক্যানসার হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পর্যবেক্ষণের তালিকায় থাকা যাত্রীরা যাতে দু’সপ্তাহ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন তার উপযোগী পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। চা-জলযোগ-সহ চার বেলার খাবারের বন্দোবস্ত থাকছে। মেনুতে ভাত-রুটি দু’রকমের খাবারই থাকবে। রাজ্যের ৭৮টি সীমানা-বিন্দুতে স্ক্রিনিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। এদিন তার একটি আদর্শ আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স এবং প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের যাতে ঘাটতি না-হয়, সে জন্য জনস্বার্থে অবসরের পরেও যাঁরা কাজ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের অবসরের বয়সসীমা দু’বছর বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

এ দিন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন দেশের ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং তার মোকাবিলায় প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ক্যাবিনেট সচিব। সংশ্লিষ্ট সমস্যার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিটি রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে। বিধিও স্থির করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। রাজ্যগুলি তা

পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চললে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয়ের কাজটা ইতিবাচক হয়। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্যাবিনেট সচিব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন বলে খবর। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘হাঁচি-কাশি মানেই করোনা নয়। নিজেরা নিজেদের যত্ন করলেই ভাল থাকতে পারি। অযথা আতঙ্কিত হবেন না।’’

নমুনা পরীক্ষা শুধু দু’জনের

শনিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ছ’জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ইটালি ও সুইৎজ়ারল্যান্ড-যোগে ভর্তি দু’জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। দিল্লি-যোগে হাওড়ার বাসিন্দা এক মহিলা, দার্জিলিং-যোগে গড়িয়ার বাসিন্দা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে ঘুরে আসা নৈহাটির যুবকের এখনই নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় বনগাঁর এক বাসিন্দাকেও আইডি-তে পাঠানো হয়েছে। তবে তার কোনও করোনা-লক্ষণ নেই। অহেতুক ওই রোগীকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষা অণিমা হালদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement