Coronavirus

প্রতিষেধক নেই, করোনা মোকাবিলায় কী ভাবে প্রতিরোধ বলয় গড়ছে রাজ্য?

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১৮টি হাসপাতালে মোট ৯২টি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ১৮:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। ইতিমধ্যে করোনা থাবা বসিয়েছে ভারতেও। তা যাতে মহামারির চেহারা না নেয়, সে কারণে রাজ্যগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্কুল থেকে বিমানবন্দর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পণ্য পরিবহণ— প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতার বিষয়ে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য।

Advertisement

এ রাজ্যের শহরগুলিতে তো বটেই, গ্রামপঞ্চায়েত স্তরেও সচেতনতা প্রচার চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর। ওই দফতরের দাবি, বাংলার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাতে পোস্টার, ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি রাজ্যের সড়কপথের বিভিন্ন চেকপোস্টেও খোলা হয়েছে স্বাস্থ্য শিবির। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১৮টি হাসপাতালে মোট ৯২টি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। সেখানে এই মুহূর্তে রয়েছেন ৩১ জন। পাশাপাশি বাড়িতেও ১ হাজার ১৩৬ জন ‘হোম আইসোলেশনে’ রয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কারও নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নেই।

Advertisement

প্রতিষেধক নেই, তাই সচেতনতায় জোর

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বা টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি। ফলে, ভাইরাসের মোকাবিলায় সচেতনতাই একমাত্র হাতিয়ার বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর। জ্বর-সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বলছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। দু’টি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে— ০৩৩-২৩৪১২৬০০ এবং ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২। করোনা নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে। ওই কন্ট্রোল রুমে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকও থাকছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো আশঙ্কা যদি কারও ক্ষেত্রে তৈরি হয়, তা হলে তাঁকে ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে তাঁর থেকে ন্যূনতম ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার পর ২৮ দিন পর্যন্ত নিজের স্বাস্থ্যের উপরে নজর রাখতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

করোনায় কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে প্রতিনিয়তই আদানপ্রদান চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরামর্শ মেনে তৈরি রাখা হচ্ছে রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে। কলকাতার বেলেঘাটা আইডি থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ— রাজ্যের সমস্ত বড় হাসপাতালেই আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত কেউ ভর্তি হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে কারণে বেলেঘাটা আইডি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, এসএসকেএম, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পাঁচ জন প্রতিনিধিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়তই আমাদের যোগযোগ রয়েছে।’’

নোভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও তাঁদের ১৪ দিন ‘হোম আইসোলেশনে’ রাখার জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। হাসপাতাল সুপারদের কাছেও ওই নির্দেশিকা ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নেতৃত্বে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আরও পডু়ন: একাধিক রাজ্যের বহু জায়গায় ঘুরেছেন ইতালির পর্যটকরা, করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে আরও

সীমান্তে নজরদারি

এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী রাজ্য। নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ— প্রতিবেশী এই তিন দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যের। সে কারণে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং নেপাল সীমান্ত দিয়ে প্রতি দিনই বহু মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করেন। ওই সব সীমান্তবর্তী এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির বানিয়ে মানুষজনের শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-কেও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। নেপালের সঙ্গে এ রাজ্যের যে সব জায়গায় চেকপোস্ট রয়েছে, সেখানেও বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির খোলা হয়েছে। নেপালের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলির পঞ্চায়েতকে সতর্ক হতে বলা হচ্ছে। স্পর্শকাতর পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে নজরদারির জন্য নতুন করে চেকপোস্ট গড়তে বলা হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রচারপত্র বিলি, ফেস্টুন ও ব্যানার লাগানোর উপরে জোর দিতে হবে বলেও নির্দেশ এসেছে। এ রাজ্যের স্থল সীমান্তের সাতটি চেক পোস্টে এখনও পর্যন্ত নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় ৯০ হাজার মানুষের শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।

বিমানবন্দরে বিশেষ নজরদারি

কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে চিন-সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা যাতায়াত করেন। সে কারণে এই বিমানবন্দরে করোনা সংক্রামিত সন্দেহে যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাঁদের ভিসা এবং পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তাঁরা কোথায়, কত দিন ছিলেন? চিন হয়ে অন্য কোনও দেশ ঘুরে কেউ ভারতে প্রবেশ করেছেন কি না অথবা জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে বিমানে উঠেছিলেন কি না সে সবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলেছে, এখনও পর্যন্ত কলকাতা ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে মোট ৪৩ হাজার যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাসের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

এসএসকেএম হাসপাতালে করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক প্রচার। ছবি: রয়টার্স

স্কুল সচেতনতা

সচেতনতা প্রচার থেকে বাদ যাচ্ছে না স্কুলও। শহর থেকে গ্রাম— সব স্কুলেই পড়ুয়াদের মধ্যে নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালাতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, ‘‘চিন থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। কোনও টিকা আবিষ্কার হয়নি। ফলে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।’’ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে প্রত্যেক জেলার স্কুল পরিদর্শককে সচেতনতা বাড়ানোর বার্তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলিতেও সচেতনতা প্রচার চলছে। দোল উপলক্ষে বিশ্বভারতীতে চিনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে তা বাতিল হয়েছে।

স্কুল শিক্ষা দফতরের সতর্কাবার্তা। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: নয়া চ্যালেঞ্জ, বলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ভাইজাগে ৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা

বন্দরেও সতর্কতা

পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে জলপথ অন্যতম মাধ্যম। চিন-সহ বিভিন্ন দেশের বহু জাহাজে পণ্য এ রাজ্যে বন্দরগুলিতে ঢোকে। কাজেই, বন্দরগুলিতেও সতর্কামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হলদিয়া বন্দরের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন কর্তৃপক্ষ। বিদেশি জাহাজ পর্যবেক্ষেণ ও বন্দরের কর্মীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য বিশেষ দল গড়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তিনটি বন্দরে ৩ হাজারের বেশি জাহাজকর্মীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement