জিনারুলের রিপোর্ট নেগেটিভ। —নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে যুবকের মৃত্যু ঘিরে, এ রাজ্যেও যে করোনা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, অবশেষে তা কিছুটা হলেও কাটল। ওই যুবকের লালারসের যে নমুনা নাইসেডে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল, সোমবার তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাতে ওই যুবকের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।
মৃত ওই যুবকের নাম জিনারুল হক (৩৩)। শনিবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় তার পর দিন সকালেই হাসপাতালে ভর্তি হন। সেইসময় তাঁর রক্তে শর্করার পরিমাণ ৫৫০ মিলিগ্রামের বেশি ছিল। সেই সঙ্গে জ্বর, হাঁচি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের লক্ষণও ছিল। যে কারণে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
তার পরই ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন কিনা, তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। বিমানবন্দরে নামা থেকে যে ১৪ জন জিনারুলের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদেরও আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে জিনারুলের রিপোর্ট যেহেতু নেগেটিভ এসেছে, তাই এ বার তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্ক: সৌদি থেকে ফিরেই যুবকের মৃত্যু মুর্শিদাবাদে
আরও পড়ুন: দেশে আক্রান্ত বেড়ে ৪০, এ বার কেরলে ৩ বছরের শিশুর দেহে মিলল ভাইরাস
জিনারুলের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় স্বস্তিতে স্বাস্থ্যদফতরের আধিকারিকরাও। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, এতে একটা বড় শিক্ষা হল। কারণ জিনারুলের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হতো, সে ক্ষেত্রে তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলকে চিহ্নিত করে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে অনেকটা সময় লেগে যেত। তাতে সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ত আরও। এ যাত্রায় তেমনটা হয়নি।
সেই সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের যুক্তি, বিমানবন্দরের থার্মাল স্ত্রিনিংয়ে জিনারুলের শরীরে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। অথচ শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি জিনারুলের দেহের তাপমাত্রা বেশি ছিল। সৌদি আরব থেকে রওনা দেওয়ার সময়ই অসুস্থ ছিলেন তিনি। বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে তা ধরা পড়লে, আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা যেত। তাই বিমানবন্দরের স্ক্রিনিং ব্যবস্থাকে আরও বড় করার দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। আরও কড়া নজরদারি চালানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
যদিও জিনারুলের পরিবারের দাবি, ডায়াবিটিসের সমস্যা থাকলেও শনিবার তেমন বাড়াবাড়ি হয়নি তাঁর। রবিবার সকালেই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) নির্দেশিত নিয়মাবলী মেনেই এ ক্ষেত্রে সমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাসও।
তবে জিনারুলের রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও, করোনার লক্ষণ নিয়ে বেলেঘাটা আইডি-তে এখনও ভর্তি রয়েছেন মুর্শিদাবাদেরই আর এক বাসিন্দা।