মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
শুধু নিজের রাজ্যের জন্যই নয়, করোনাভাইরাস প্রভাবিত সব রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠক থেকে সব দলের সই করা আর্থিক দাবির চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আজ, মঙ্গলবার সেই চিঠি পাঠানোর কথা রাজ্য সরকারের।
বৈঠকে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি-মিলিয়ে ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হাজির ছিলেন। বিরোধী প্রত্যেক দলের প্রতিনিধিই এ দিন রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ছেড়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে চান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীও প্রত্যেক দলের বক্তব্য এ দিন শুনেছেন সময় দিয়ে। বিরোধীদের বেশ কিছু পরামর্শ নথিবদ্ধও করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, করোনা-পরিস্থিতিতে এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন দলের নেতারা ও আমলারা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীও বসেছিলেন তাঁদের থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানান, ৫০ হাজার কোটি টাকার দেনা শোধ করে এবং সামাজিক প্রকল্পগুলির দায়িত্ব সামলেও করোনা-মোকাবিলায় ২০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। বেতন দেওয়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, রাজ্য সরকারের ভার কিছুটা লাঘব করা। তৃণমূলের তরফে উপস্থিত দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, এই প্রশ্নে সর্বদলীয় প্রস্তাব তৈরি করা হোক, যা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীকে। সিপিএম, কংগ্রেস এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে।
আরও পড়ুন: বাইরের কেউ এসে ভর্তি না হলে গ্রেফতার, নির্দেশ
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ‘‘শুধু নিজের রাজ্যের জন্য নয়, সব রাজ্যের জন্য লড়াই করছি। এই বৈঠক থেকে বার্তা যাক—করোনা সামলাতে প্রত্যেক রাজ্যকে বিশেষ তহবিল দিক কেন্দ্র। কী অবস্থায় কাজ করছি? যা আছে, তা দিয়েই সামলাতে হচ্ছে।’’ পার্থবাবুর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘খসড়া তৈরির সময় সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-কে রাখুন। সেটি তৈরি করে সকলকে দেখিয়ে নিন। সকলের বক্তব্য নিয়ে সেই দাবি কেন্দ্রকে পাঠাব।’’
এ দিন আক্রান্তদের জন্য ‘সেফ হাউজ’ তৈরি করা, টাকা থেকে সংক্রমণ ছড়ানো আটকানো, অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা করার মতো একাধিক বিষয়ে দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উদ্দেশে জানান, নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয় রাজ্য সরকার। কেন্দ্র বুলবুলের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রকে বলুন ঋণ মকুব করতে, বুলবুলের টাকা দিতে।’’
বিজেপি-র পাশাপাশি অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্যের দাবি এ দিন তুলেছিল বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবি, আর্থিক বছরের শেষে অনেক ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আর্থিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে ব্যাঙ্কে ঋণ পরিশোধ-সহ নানা বিষয় তাঁদের ঘাড়ে চাপলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী সকলের উদ্দেশে জানান, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র যাতে এই ব্যাপারে সহযোগিতা করে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন তিনি। এরই সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সহযোগিতা এবং রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানানোর কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীদের আশ্বস্ত করে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতির পর্যালোচনায় মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি ইতিমধ্যেই গড়া হয়েছে। পুলিশেও কোর-গ্রুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। বাজারএলাকাগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে সেই কোর-গ্রুপ। বিরোধীরা পরামর্শ দিতে চাইলে রাজ্য সরকারকে ই-মেলে তা পাঠানোর অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।