প্রস্তুতিতে কোনও রকম ফাঁক রাখা যাবে না। বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল কলেজগুলির পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের সেই বার্তা দিল স্বাস্থ্য ভবন। করোনা সন্দেহে এক ইটালীয় পর্যটক দম্পতিকে সকালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দিনের শেষে তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে জানানো হয়, করোনার চিহ্ন মেলেনি।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানে ইটালি থেকে আসা তিন মহিলার স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। তাঁদেরও করোনার লক্ষণ নেই বলে জানায় পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। পেরুর এক নাগরিক এবং সৌদি আরব থেকে ফেরা রাজ্যের এক বাসিন্দাকে ইডিতে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনের অডিটোরিয়ামে এ দিন করোনা নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে সব মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ, মেডিসিন বিভাগের এক জন চিকিৎসক এবং প্যাথলজিস্টকে ডাকা হয়েছিল। জেলার ক্ষেত্রে ছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ (টু) এবং মেডিসিনের এক চিকিৎসক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩। ওই ভাইরাস যাতে আর না-ছড়ায়, সেই জন্য বেশ কিছু দাওয়াইয়ের কথা বলা হয়েছে এ দিনের শিবিরে। কাদের পরীক্ষা প্রয়োজন, সংক্রমিত হলে কী ধরনের চিকিৎসা হবে— সেই সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রোজ করোনা-কবলিত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং-তালিকা রাজ্যে পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, সেই তালিকাভুক্তদের উপরে পর্যবেক্ষণের কাজ যেন ব্যাহত না-হয়। প্রয়োজনে পর্যবেক্ষক বাড়াতে হবে। প্রতিটি জেলাকে কোয়ারেন্টাইনের জায়গা বাছতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজ আইসোলেশন ওয়ার্ডের পরিকাঠামো সংক্রান্ত নির্দেশ মানেনি। ফলে শিবিরের পরামর্শের কতটা বাস্তবায়িত হবে, প্রশ্ন থাকছে। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, আইসোলেশন ওয়ার্ডের পরিকাঠামো কেমন হবে, তার তালিকা দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের সুপারদের। সেই তালিকা মেনে আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়া হয়েছে কি না, প্রতিনিধিরা তা দেখতে যাবেন।
ইটালির যে-দম্পতি এ দিন আইডি-তে ভর্তি হন, তাঁরা ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতে পৌঁছন। করোনার ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ডে’র মধ্যে গত চার দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। সন্ধ্যায় তাইল্যান্ডের এক নাগরিককে আইডি-তে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষা অণিমা হালদার জানান, বুধবার যে-দশ জন ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের আট জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার এক বাসিন্দা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক জন পর্যবেক্ষণে আছেন। প্রথম জন টেক্সাস-যোগে এবং দ্বিতীয় জন কুয়েত-যোগে পর্যবেক্ষণাধীন।
আইডি-র কিছু চিকিৎসকের বক্তব্য, নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেকে নির্দেশিকা মেনে কাজ করছেন না। লক্ষণ নেই, বিদেশে যাননি, কোনও বিদেশির সঙ্গে সংস্পর্শেও আসেননি। তবু অনেককে আইডি-তে পাঠানো হচ্ছে। মুখোশের ব্যবহার নিয়ে নির্দেশিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছে, কোনও রকম লক্ষণ ছাড়া যথেচ্ছ মাস্কের ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে। নির্দেশিকার বক্তব্য, ব্যবহার বিধি না-জেনে মাস্ক ব্যবহার করলে সুস্থ মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। আতঙ্কে রাশ টানতেই এই নির্দেশিকা।
‘‘পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। ভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্য আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।