চলছে লিফট জীবাণুমুক্ত করার কাজ।—ছবি পিটিআই।
সর্বাত্মক করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যের সচিবালয় নবান্ন স্বাভাবিকই ছিল। বুধবার কিন্তু সেখানকার কর্মীদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক আর হাতে স্যানিটাইজ়ার। এক রাতের মধ্যেই যেন ভূতের বাড়ির চেহারা নিয়েছে ঝাঁ-চকচকে নবান্ন!
রাতারাতি এমন দৃশ্যবদল কী ভাবে? মঙ্গলবারেই জানাজানি হয়ে যায়, বিলেতবাসের সূত্রে রাজ্যের প্রথম করোনা-রোগী তরুণের মা স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিব। রবিবার ওই তরুণ লন্ডন থেকে ফেরার পরেও সোমবার পর্যন্ত তাঁর মা দিব্যি নবান্নে এসেছেন। তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে প্রশাসনিক মহলে।
বুধবার সকাল থেকেই সাজো সাজো রব শুরু হয়ে যায় পূর্ত দফতরের অন্দরে। অতিরিক্ত কর্মী এনে জীবাণুমুক্ত করার রাসায়নিক দিয়ে ১৪তলা নবান্ন সাফসুতরো করার কাজ চলে। কাগজ-ফাইল রাখার প্রতিটি আলমারি, চেয়ার ও টেবিল-সহ যাবতীয় আসবাব পরিষ্কার করেন সাফাইকর্মীরা। ১৪তলায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে একতলার প্রেস কর্নার— সর্বত্র সাফাইয়ের কাজ চলে দফায় দফায়। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরিষ্কার করা হয় ভিআইপি-সহ নবান্নের বিভিন্ন তলায় ওঠার সমস্ত লিফট। নবান্নের মূল গেট দিয়ে যাঁরাই ভবনে ঢুকেছেন, ‘থার্মাল গান’-এর সাহায্যে তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। তার পরের পর্যায়ে স্যানিটাইজ়ারে হাত জীবাণুমুক্ত করে তবে সকলকে ঢুকতে হয়েছে নবান্নে।
বাড়তি আতঙ্ক ছড়িয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট অফিসার কাজের প্রয়োজনে সোমবার অনেক ক্ষণ ছিলেন নবান্নের ১৩তলায়। ফলে সরকার মনে করলে তাঁরাও নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন। এর পাশাপাশি কর্মী-অফিসারদের মধ্যে রব উঠে যায়, অফিস কি আর খোলা থাকবে! মহারাষ্ট্রে তো সরকার ইতিমধ্যেই ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে!
কর্মীদের স্বস্তি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, নির্দিষ্ট ‘রোস্টার’ বা কাজের তালিকা তৈরি করা হবে। সাধারণ ভাবে বিকেল ৫টার পরিবর্তে কর্মীদের ছুটি হবে ৪টেয়। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ বোধ করলে অনলাইনে ছুটির আবেদন করা যাবে। কী ভাবে সেই পদ্ধতি চলবে, মুখ্যসচিবকে তা স্থির করার নির্দেশ দেন মমতা। দ্রুত ছুটি করে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সন্ধ্যায় সরকারি-বেসরকারি সব কর্মী একসঙ্গে বাড়ি ফেরেন। তাতে বাসে-ট্রেনে ভিড় হয়। ভিড় কিছুটা কমাতে সরকারি কর্মীদের কিছুটা আগে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তাঁরা আগে আগে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এতে কিছুটা হলেও বাস-ট্রেন ফাঁকা থাকবে।’’