বিকাশ ভবনে ইন্টারভিউ দিতে আসা প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
কোলে মাসখানেকের বাচ্চা। সিঁড়িতে দীর্ঘ ক্ষণ বসে আছেন মহিলা। সঙ্গে তাঁর মা। ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন বর্ধমানের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। তিনি যে-সিঁড়িতে বসে আছেন, সেখানে তো বটেই, সল্টলেকের বিকাশ ভবনের আটতলার করিডরে তখন তিলধারণের জায়গা নেই।
ওই ভবনে কলেজের তিন ধরনের অতিথি শিক্ষকদের ‘ফিজ়িক্যাল ভেরিফিকেশন’ চলছিল বুধবার দুপুরে। করোনা-আতঙ্কের আবহেও তা স্থগিত করা হয়নি। তাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বিকাশ ভবনের কর্মীদের মধ্যে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ইন্টারভিউ দিতে আসা প্রার্থীরাও।
এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছিল সব মহলেই। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটল উচ্চশিক্ষা দফতর। বৃহস্পতিবার দফতরের তরফ থেকে কলেজের অধ্যক্ষদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইন্টারভিউয়ের প্রার্থীদের আর সশরীরে আসতে হবে না। এই তথ্য যেন তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে স্বস্তি ফিরেছে বিকাশ ভবনে। কিন্তু ভাইরাস-দাপটে সব ধরনের জমায়েত বন্ধ রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরেও কী করে ইন্টারভিউ চলল, সেই প্রশ্ন উঠছে।
করোনা-সতর্কতায় ছোট-বড় সব জমায়েতেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। সেই নিয়ম কঠোর ভাবে মানার জন্য আইনও বলবৎ হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বিকাশ ভবনে এক সপ্তাহ ধরে রোজ ৬০০-৯০০ লোকের আনাগোনায় রাশ টানা হল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দফতরের কর্মীরাই।
প্রার্থীদের অনেকেরই দাবি ছিল, সরকার ইন্টারভিউ স্থগিত রাখুক। তবে অতিথি শিক্ষকদের সংগঠনগুলির বক্তব্য, এত বেশি সংখ্যায় না-ডেকে প্রার্থীর সংখ্যা কমানো হোক। কারণ ১০-১১ হাজার শিক্ষকের বেতন দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে।
রাজ্যের কলেজগুলিতে অতিথি শিক্ষকদের ‘ভেরিফিকেশন’-এর কাজ শুরু হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক এবং অতিথি শিক্ষকদের এ বার ‘স্টেট এডেড কলেজ টিচার্স’ বলা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নতুন ব্যবস্থার ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ।
এই ‘ভেরিফিকেশন’ বা যাচাই করছে উচ্চশিক্ষা দফতরের গড়া চার সদস্যের কমিটি। যে-সব আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে কমিটি সন্তুষ্ট হয়েছে, তাঁদেরই ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছে। একসঙ্গে একাধিক জেলার প্রার্থীদেরও ইন্টারভিউয়ে ডাকা হচ্ছে। মঙ্গলবার অন্তত ৯০০ প্রার্থীর ইন্টারভিউ ছিল।
বুধবার ডাকা হয়েছিল কমবেশি ৬৫০ প্রার্থীকে। অনেকেই এসেছিলেন কয়েক মাসের সন্তানকে নিয়ে। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘না-এসে উপায় নেই। বাধ্য হয়েই সন্তানকে নিয়ে এসেছি। এত ভিড়ে আমি বা বাচ্চা, যে-কেউ আক্রান্ত হতে পারি। তেমন হলে এর দায় কে নেবে?’’ শিক্ষকদের সংগঠনের তরফে শিক্ষা দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। পার্ট টাইম শিক্ষকদের সংগঠন ‘পুটা’-র সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ বলেন, ‘‘সময়ে ইন্টারভিউ শেষ না-হলে শিক্ষকদের বেতন তিন মাস পিছিয়ে যাবে। সরকারের
কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম, পরিস্থিতি বিচার করে বিকল্প ব্যবস্থা হোক। সেটাই হয়েছে।’’