করোনা-আতঙ্ক: ওষুধের দোকানে নির্দিষ্ট মাস্ক না-পেয়ে সাধারণ মাস্ক কিনতে ভিড়। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে মধ্য কলকাতার বিভিন্ন দোকানে হত্যে দিয়েছেন রাকেশ সিংহ। কোথাও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ‘মাস্কের’। হতাশ রাকেশ বললেন, ‘‘এক বন্ধু দিল্লি যাবে বলে এন-৯৫ মাস্ক চেয়েছে। কোথাও পেলাম না। ঘোরাঘুরিই সার!’’
‘এন-৯৫ মাস্ক’ তো বটেই, উধাও হয়েছে হাত সাফ করার রাসায়নিক বা ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’ও! ধর্মতলার একটি পুরনো ওষুধের দোকানের কর্মী বললেন, ‘‘আগে সপ্তাহে ১০-১২ শিশি স্যানিটাইজ়ার বিক্রি হত। গত তিন দিনে শ’খানেক শিশি বিক্রি হয়েছে! ডিলারের ঘরেও আকাল।’’
এই ‘অস্বাভাবিক’ চাহিদার কারণ করোনা-আতঙ্ক। বাজার ঘুরে দেখা গেল, ভাল মানের এক জোড়া ‘এন-৯৫’ মাস্কের দাম প্রায় ১৫০ টাকা। কিন্তু দোকানিরা জানাচ্ছেন, চাহিদা বাড়ায় তা ৪০০-৫০০ টাকাতেও বিকোচ্ছে। কসবার এক বাসিন্দা সাধারণ ধুলো আটকানোর ৮০ টাকার মাস্ক ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে! স্যানিটাইজ়ারের দামও দোকানদারেরা ইচ্ছেমতো নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
দিল্লিতেও মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের আকাল। ২০ টাকার মাস্ক ৭০ টাকায় বিকোচ্ছে, ৮০ টাকার স্যানিটাইজ়ারের জন্য দিতে হচ্ছে ২০০। উঠছে কালোবাজারি অভিযোগ।
অনলাইনেও ‘মাস্ক’ বিক্রির হার বেড়েছে। দক্ষিণ ভারতবাসী ছেলের জন্য ‘মাস্ক’ অনলাইনে বরাত দিয়েছিলেন কলকাতার এক মহিলা। বৃহস্পতিবার অনলাইন শপিং সংস্থাটি ওই যুবককে ফোন করে জানিয়েছে, ‘এন-৯৫’ মাস্ক ফুরিয়ে গিয়েছে। বদলি হিসেবে অন্য মাস্ক দিতে পারে তারা।
‘এন-৯৫’ মাস্ক মূলত বায়ুবাহিত সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়। এটি আমেরিকার সরকারি সংস্থা ‘ফেডেরাল ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্বীকৃত। দোকানিরা জানাচ্ছেন, এই ‘মাস্ক’ মূলত এ দেশেই তৈরি হয়। কিছু ‘মাস্ক’ চিন, তাইওয়ানের মতো দেশ থেকেও আসে। তবে আমদানি করা মাস্কের পরিমাণ স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি দোকানিরা। ‘স্যানিটাইজ়ার’ তৈরি করে দেশি সংস্থাই। দোকানিরা জানান, বাজারে জেল ও তরল, দু’ধরনের স্যানিটাইজ়ার মেলে। তরল মূলত হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে লাগে। সেগুলিই বেশি বিকোচ্ছে। নিয়মিত ক্রেতারা অনেক সময় আগাম দাম দিয়ে স্যানিটাইজ়ার ‘বুক’ করে যাচ্ছেন চাঁদনির বিভিন্ন ওষুধের দোকানে।
মধ্য কলকাতার বিভিন্ন দোকানে ঘুরে জানা গেল, দৈনিক অন্তত ৪০-৫০ জন ক্রেতা মাস্ক কিনতে আসছেন। চাহিদা বাড়ায় অসাধুরা ঝোপ বুঝে কালোবাজারি করতে পারে কিংবা কেউ কেউ ‘নকল’ ‘এন-৯৫ মাস্ক’ও বিক্রি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই নির্ভরযোগ্য দোকান থেকেই এই মাস্ক কেনা উচিত বলে বিক্রেতাদের পরামর্শ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চাহিদা বুঝে সব ধরনের ‘মাস্ক’ দ্বিগুণ-তিন গুণ দামেও বিক্রি করেছেন অনেকে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গ্লাভস, মাস্কের কালোবাজারি নিয়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের প্রতিনিধিরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কোথায় কোথায় কোন কোন সংস্থার গ্লাভস ও মাস্ক বিক্রি হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আজ, শুক্রবার তা স্থির হতে পারে।