ছবি: পিটিআই।
সম্প্রতি দুই শিশুকে নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরেছেন শিলিগুড়ির দম্পতি। অথচ হোম কোয়রান্টিনে থাকছিলেন না। মহিলা শিশুদের নিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বাপের বাড়ি চলে যান। তাঁর স্বামী চলে যান ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে। শনিবার সেই খবর পান ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কমল আগরওয়াল। তিনি স্বাস্থ্য দফতরকে জানান। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী-আধিকারিকদের দল যেতে দেরি করছে দেখে তিনি নিজেই পুলিশ ডেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে ওই পরিবারটিকে উত্তরবঙ্গ মে়ডিক্যালে পাঠান। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ ফেরত বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। অভিযোগ, শিলিগুড়িতে বিদেশ থেকে ফেরা অনেকেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে চাইছেন না। অনেকে হোম কোয়রান্টিনে থাকছেন না বলেও অভিযোগ। শুক্রবার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এমন একটি পরিবারের কাছে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের গালিগালাজও হজম করতে হয়। শনিবার ১০ নম্বর এবং আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদেশ থেকে ফেরা বাসিন্দাদের মেডিক্যালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব তাঁদের কঠোরভাবে সরকারি নির্দেশ মানার আর্জি জানিয়েছেন। নয়তো তাঁদের এবং অন্যদের স্বার্থেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন।
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা বিদেশ থেকে বা করোনা সংক্রমণ ঘটেছে এমন রাজ্য থেকে আসছেন তাঁদের কাছে অনুরোধ সরকারি নির্দেশ মেনে হোম কোয়রান্টিনে থাকুন। ঘোরাফেরা করবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীরা গেলে বাজে ব্যবহার করছেন এটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিরোধের জন্য যে সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা না মানলে প্রশাসন কিন্তু ব্যবস্থা নেবে।’’ কারণ বিপুল সংখ্যক মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সরকার নীরব থাকবে না বলেও সতর্ক করেছেন মন্ত্রী।
শনিবার পর্যটনমন্ত্রী ভারত-নেপাল পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নজরদারি ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। সেখানে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা দস্তানা ব্যবহার করছেন না দেখে তাঁদের তা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ দিন দুপুর পর্যন্ত নেপাল থেকে ভারতে আসতে আগ্রহী ১৭০ জন বাসিন্দাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের শরীরে জ্বর, সর্দির মতো উপসর্গ থাকায়। ভারত থেকেও যাঁরা নেপালে যাচ্ছেন নেপালের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধাননগরের এক বাসিন্দা তাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন। ভারতনগরের বাসিন্দা এক দম্পতি ভ্রমণ সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। তাঁরা নরওয়ে থেকে এ দিন ফিরেছেন। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বিদেশ থেকে ফিরেছেন। হাকিমপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলা সম্প্রতি দুবাই থেকে ফিরেছেন। তাঁর স্বামী সেখানে কাজ করেন। এর মধ্যে তাঁরা সুন্দরবন ঘুরে এসেছেন বলে সূত্রের খবর। এখন পরিবারের অনেকে অসুস্থ বোধ করছেন বলে অভিযোগ। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন। পড়শিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সকলকেই হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
পর্যটনমন্ত্রী এ দিন জানান, মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশিকা দিয়েছেন তা ঠিক মতো পালন হচ্ছে কি না তা দেখার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কারা বাইরে থেকে ফিরছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কাউন্সিলররা তা দেখুন। খবর পেলে জানাবেন স্বাস্থ্য দফতর, পুলিশকে। তাঁদের ‘করোনা স্ক্রিনিং’ হবে।’’ তিনি জানান, পুরসভার সব ক্ষেত্রে পরিকাঠামো নেই। এখন দোষারোপেও সময় নয়। সকলে মিলে পরিস্থিতি সামালাতে হবে।