রাজ্যের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেে অনুমোদন চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। ছবি: পিটিআই।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর প্রকাশ করা প্রাথমিক তালিকায় কোভিড-১৯ ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজ্যের কোনও বেসরকারি ল্যাবরেটরির নাম নেই। কোভিড-১৯ আক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে আমাদের দেশ, এমনটাইজানিয়েছেন আইসিএমআর-এর অধিকর্তা বলরাম ভার্গব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে আইসিএমআর। প্রতিদিনই আরও বেশি সংখ্যায় নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। সে কারণে এক দিকে সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা যেমন বাড়ানো হচ্ছে, তেমনই বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রকেও কোভিড-১৯ পরীক্ষার ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র।
আইসিএমআর-এর নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল যে, দেশের যে সমস্ত ল্যাবরটরি ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিস’ (এনএবিএল) অনুমোদিত বেসরকারি ল্যাবে যে কোনও আরএনএ ভাইরাস পর্যবেক্ষণের ‘রিয়েল টাইম পলিমারেইজ চেন রিঅ্যাকশন’ পরীক্ষার বন্দোবস্ত আছে, সেখানেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা হওয়া সম্ভব।
সোমবার আইসিএমআর সারা দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত বেসরকারি ল্যাবের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় দিল্লি, গুজরাত, হরিয়ানা, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুর ১২টি বেসরকারি কেন্দ্রের নাম রয়েছে। এ রাজ্যের কোনও বেসরকারি ল্যাবরটরির নাম নেই ওই তালিকায়। সরকারির মধ্যে শুধু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের নাম রয়েছে। ইতিমধ্যে আইসিএমআর জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ১১৬ করা হয়েছে। দেশের সব রাজ্যেই সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ওই তালিকা অনুসারে ১১৬টির মধ্যে ৮৯টি কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করতে তৈরি। বাকি ২৭টিকে দ্রুত উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। এখনও রাজ্যে দু’টি মাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র— বেলেঘাটা নাইসেড এবং এসএসকেএম। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে এনএবিএল অনুমোদিত ল্যাবের সংখ্যা ২৭৪টি। তাদের অনেকেই কোবিড-১৯ টেস্টের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু আইসিএমআর যে গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে, তা পূরণ করতে পারেনি ওই ল্যাবগুলি। ওই গাইডলাইন মেনে সবটা পূরণ করলে তবেই অনুমোদন পাবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কিছুটা ছাড়ের মধ্যেই রাজ্যে শুরু হল লকডাউন, কাল থেকে কড়া ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্র হিসাবে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও সরকারি হাসপাতালই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পায়নি। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বটে, তবে তা কার্যকরী হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। আপাতত এ রাজ্যে সব মিলিয়ে তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্র, তার মধ্যে দু’টিই কলকাতায়। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষদের নমুনা পরীক্ষা করতে এখনও পর্যন্ত পুরোটাই নির্ভর করতে হচ্ছে কলকাতার উপর। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা স্বীকার করছেন, এর ফলে নাইসেডের উপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে। কারণ ২২ মার্চ পর্যন্ত১২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার ৯০ শতাংশই করা হয়েছে নাইসেডে। এসএসকেএমে পরীক্ষার ব্যাবস্থা থাকলেও সেখানে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে খুবই কম। এক স্বাস্থ্যকর্তা স্বীকার করেন, এর ফলে রাজ্যে যেখানে ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭ এবং মৃত্যুও হয়েছে ১ জনের, সেই পরিস্থিতিতে আরও অনেক সরকারি এবং বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্র প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আইসিএমআরের অধিকর্তা বলরাম ভার্গব কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার নতুন নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন করোনা আক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ের মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসাবে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী এখন থেকেকাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ অন্তর্দেশীয় উড়ান, ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারের
কাদের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে—
১। যে সমস্ত ব্যক্তি ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং সর্দি-কাশি-জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ রয়েছে।
২। করোনা পজিটিভ রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের, যাঁদের ওই সমস্ত উপসর্গ দেখা গিয়েছে।
৩। উপসর্গ রয়েছে এমন সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসক।
৪। যে কোনও হাসপাতালে ভর্তি সমস্ত রোগী, যাঁদের ওই উপসর্গগুলি দেখা দিয়েছে।
৫। করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি, যাঁদের কোনও উপসর্গ নেই।
৬। সেই সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী যাঁরা পর্যাপ্ত সতর্কতা ছাড়া কোনও করোনা-আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন কিন্তু কোনও উপসর্গ নেই। এঁদের ক্ষেত্রে সংস্পর্শে আসার ৫ম এবং ১৮তম দিনে নমুনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আইসিএমআর।
রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন,‘‘নয়া নিয়মবিধি অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে এক ধাক্কায়। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আরও অনেক সরকারি এবং বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্র প্রয়োজন।”