Corona

বাংলার নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা হচ্ছে: মমতা

করোনা-আবহে রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের নাম না করে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি— ভিডিয়ো থেকে।

বেশি পরীক্ষা মানেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে, এমনটা নয়। এই বক্তব্যের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কম পরীক্ষা করানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কিট নিয়ে পাল্টা কেন্দ্রকে বুধবার বিঁধেছে রাজ্য। করোনা পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কিট কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলেও এ দিন অভিযোগ তোলা হয়েছে নবান্নের তরফে।

Advertisement

বুধবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে কম টেস্ট হয়নি বলে সেই বৈঠকে এ দিন দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত কিট না পাওয়া গেলেও রাজ্য করোনা পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই সতর্ক ছিল। সে কারণে স্বাস্থ্য দফতর অন্যত্র অর্ডারও দিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য দফতর আগে থেকেই অর্ডার দিয়েছিল। তাই আমরা টেস্ট করাতে পারছি। সময় মতো তো টেস্ট করাতে হবে। টেস্ট না করলে তো রোগীর মৃত্যু হতে পারে। কার দোষ এটা?” র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট প্রসঙ্গেও এ দিন সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র র‌্যাপিড টেস্টের জন্য ১০ হাজার কিট দিয়েছিল। কিন্তু সেই কিট কেন্দ্র আবার ফেরতও নিয়ে নিয়েছে। কারণ, ওই কিট ত্রুটিযুক্ত। ফেরত নেওয়া হয়েছে কোভিড টেস্টের পিসিআর কিটও।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বাংলার বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছিল। বাংলার নামে কুৎসা রটানো হচ্ছিল।”

Advertisement

আরও পড়ুন: পরিস্থিতির উন্নতি? দেশে করোনা মুক্ত জেলার সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯

করোনা-আবহে রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের নাম না করে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রোজ একে ওকে পাঠানো হচ্ছে। লকডাউন হচ্ছে কি না দেখতে। বাংলার লোক খেতে পাচ্ছে কি না দেখতে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করা হচ্ছে। বুঝতে পারছেন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?’’

কিট নিয়ে এ দিন সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহও। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে তিনি জানান, কোভিড পরীক্ষা করতে গেলে ‘আরএনএ এক্সট্রাক্টর’ প্রয়োজন হয়। সেটার জন্য রাজ্য আইসিএমআর এবং নাইসেডের উপর নির্ভরশীল। কারণ, কেন্দ্রীয় ওই দুই সংস্থা এই ‘আরএনএ এক্সট্রাক্টর’ সরবরাহ করে। মুখ্যসচিবের দাবি, রাজ্য এখনও পর্যন্ত নাইসেডের কাছ থেকে মাত্র ৩ হাজার ৪৬৫টি ‘আরএনএ এক্সট্র্যাক্টর’ পেয়েছে। অথচ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে মোট ৭ হাজার ৩৭টি।

মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘রাজ্য সঠিক সময়ে বাইরে থেকে ১৪ হাজার এক্সট্র্যাক্টরের বরাত দিয়েছিল। তার জোরেই ৭ হাজারের উপর টেস্ট করাতে পেরেছি আমরা।’’ মুখ্যসচিব একই অভিযোগ করেন কোভিড-পরীক্ষার নমুনা পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় ‘ভিটিএম কিট’ নিয়েও। তিনি জানান, একটি কোভিড-পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় দু’টি ভিটিএম কিটের। অথচ এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছ থেকে মাত্র ২ হাজার ৫০০ ‘ভিটিএম কিট’ পেয়েছে রাজ্য। অথচ, ৭ হাজার পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল অন্তত ১৪ হাজার কিটের।

র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়েও এ দিন মুখ্যসচিব সরব হন। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২২০টি র‌্যাপিড টেস্ট হয়েছে। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা আরও বেশি টেস্ট করিনি। করলে, পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা যেত। যে ক’টি রিপোর্ট এসেছে, তা-ও ঠিক কি না জানি না। কারণ, টেস্ট কিট-ই তো ত্রুটিযুক্ত।”

তিনি আরও জানান, বুধবার বিকেল পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত ৩০০ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ২৭৪। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন। এখনও পর্যন্ত রোগ মুক্ত হয়েছেন ৭৯ জন। মৃতের সংখ্যা ১৫ থেকে আর বাড়েনি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা-পরীক্ষা হয়েছে ৮৫৫টি। তার মধ্যে পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ২৬টি। এর পরেই মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছিল যে, রাজ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কম পরীক্ষা করাচ্ছে। এই তথ্যই স্পষ্ট করে দেয় যে, কম টেস্ট করে তথ্য লুকনো হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন: সঙ্ঘাত তো শেষ কাই, আজও কেন ঘরে বসে কেন্দ্রীয় দল?

এই প্রসঙ্গে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের প্রসঙ্গও এ দিন তুলেছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলছিলেন, মালদহে কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা নেই। তাই কত জন পজিটিভ বোঝা যাচ্ছে না। সম্প্রতি মালদহ মেডিক্যাল কলেজে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮৫টি টেস্ট করা হয়েছে মালদহে। তার মধ্যে একটিও পজিটিভ নয়।’’ এই তথ্য দিয়ে মুখ্যসচিব জানান যে, রাজ্যের বিরুদ্ধে কম টেস্টের যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement