Coronavirus in West Bengal

বারান্দায় হাঁপিয়ে অসহায় মৃত্যু

তাঁর বাড়ি থেকে মেরেকেটে ১০ হাত দূরেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। যে বারান্দায় তিনি মারা গিয়েছেন, সেই বারান্দা থেকে হাসপাতাল স্পষ্ট দেখাও যায়।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১১
Share:

উল্টোদিকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। বাড়ির নীচে নিজের ওষুধের দোকানও। তবু অক্সিজেন ও অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে করোনায় মৃত্যু বারান্দায়। কৃষ্ণনগরে প্রৌঢ়ের দেহ সেখানেই পড়ে ছিল দীর্ঘক্ষণ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

মারাত্মক হারে বাড়তে থাকা কোভিড সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কী ভাবে ভেঙে পড়ছে তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্স ও অক্সিজেন না-পেয়ে বাড়ির বারান্দায় ধুঁকে-ধুঁকে কোভিড আক্রান্ত এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।

Advertisement

ঘটনাচক্রে তাঁর বাড়ি থেকে মেরেকেটে ১০ হাত দূরেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। যে বারান্দায় তিনি মারা গিয়েছেন, সেই বারান্দা থেকে হাসপাতাল স্পষ্ট দেখাও যায়। তা সত্ত্বেও বাঁচানোর প্রয়োজনে সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া যায়নি। কারণ, সেটি কোভিড হাসপাতাল নয়!

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে গোটা নদিয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত শুধু কল্যাণী যক্ষ্মা হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও কোনও কোভিড হাসপাতাল চালু করা হয়নি, এমনকি জেলা সদরেও নয়। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জেলার একমাত্র কোভিড হাসপাতালটি কৃষ্ণনগর থেকে অনেকটা দূরে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও বহু চেষ্টাতেও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে সেখানে পৌঁছতে পারেননি তিনি। পাননি অক্সিজেনও।

Advertisement

মৃত ব্যক্তি ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তাঁর বাড়ির নীচে তাঁর নিজের ওষুধের দোকান। গত ১৯ এপ্রিল তাঁর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁর চিকিৎসক, বাড়ির লোক ও কয়েক জন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ভাল ভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য তিনি বাড়ির ঝুল বারান্দায় এসে চেয়ারে বসেন। সেখানে বসা অবস্থাতেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। সে দিন রাত থেকে পর দিন অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতদেহ বারান্দায় ওই চেয়ারের উপরেই পড়ে থাকে।

মৃতের জামাইয়ের কথায়, ‘‘চিকিৎসক ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন নিতে বলেছিলেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের পরিষেবায় তেমন ভরসা পাচ্ছিলেন না বলে তিনি বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। যখন বৃহস্পতিবার তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তখন আমরা অনেক জায়গায় চেষ্টা করে ও ফোন করেও অক্সিজেন বা অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড়

করতে পারিনি।’’

কৃষ্ণনগর শহর জুড়ে এখন অক্সিজেনের আকাল। সদর মহকুমার অক্সিজেন সিলিন্ডারের ডিলার রাজীব ঘোষ বলেন, “অক্সিজেন তৈরির উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। সব প্লান্টে অক্সিজেনের চরম সঙ্কট। বারবার চেয়েও আমরা অক্সিজেন পাচ্ছি না।” তাঁর কথায়, ‘‘পয়সা আছে যাঁদের তাঁরা আগে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে স্টক করে রাখছেন। তাতে আকাল আরও বাড়ছে। আমরা তাই সবাইকে বলে দিচ্ছি, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থাকলে তবেই অক্সিজেন দেব। তাতেও সামলাতে পারছি না।”

এর পাশাপাশি প্রায় কোনও বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স কোভিড রোগী নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। ফলে ভরসা বলতে সরকারি ১০২ অ্যাম্বুলেন্স। সেটাও সংখ্যাও কম। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সেগুলি কোভিড রোগী পরিবহনে ব্যস্ত থাকায় কেউ ডাকার সঙ্গে-সঙ্গে যেতে পারছে না। পৌঁছচ্ছে অনেক দেরিতে। সেই একই ঘটনা শক্তিনগরের প্রৌঢ়ের ক্ষেত্রে ঘটেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।

একই অবস্থা দেখা গিয়েছে কৃষ্ণনগরের উকিলপাড়াতেও। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ সেখানে বাড়িতেই মৃত্যু হয় করোনা-আক্রান্ত বছর সত্তরের এক প্রৌঢ়ার। তাঁর ছেলে কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকেন। স্ত্রী ও মেয়েরও করোনা হয়েছে। শারীরিক আবস্থার অবনতি হয়েছিল বলে তাঁরা কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাড়িতে বৃদ্ধের মৃত্যুর পর রাত পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে পারেননি বাড়ির লোক। শেষে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা করোনা-আক্রান্ত এক ব্যক্তি কৃষ্ণনগর শহর-সংলগ্ন গোয়ালদহ এলাকায় করোনা-আক্রান্ত এক মহিলার মৃতদেহ সৎকারে নিয়ে যেতেও প্রশাসনের তরফে অনেক দেরি হয়েছে বলে অভিযোগ।

কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেনবলেন, “করোনার মৃতদের দেহ রাখার জন্য শক্তিনগর মর্গে আলাদা পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। আশা করছি, পরবর্তীতে আর কোনও সমস্যা হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement