পুজোর সময় লাগামছাডা ভিড় হয়েছিল মণ্ডপগুলিতে। ছবি পিটিআই।
‘আর কত ক্ষতি হলে তবে মানুষের হুঁশ ফিরবে?’ রাজ্যে সংক্রমণের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। তা সত্ত্বেও যে নাগরিকেরাএখনও মাস্ক ছাড়া কিংবা করোনা বিধিকে ফুৎকারে উড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে এমনই প্রশ্ন চিকিৎসক মহলের। তাঁদের একাংশের কথায়, ‘‘দৈনিক কত জন আক্রান্ত হচ্ছেন, তার হিসেব দিচ্ছে সরকার। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে প্রায় হাজারের ঘরে নিঃশ্বাস ফেলছে আক্রান্তের সংখ্যা। কন্টেনমেন্ট জ়োনও চালু করা হয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষের হেলদোল নেই।’’
স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ, শুধু দৈনিক আক্রান্ত বাড়ছে তা নয়। গত কয়েক দিনে মৃতের সংখ্যাও দশের উপরে থাকছে। বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৯৭৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় ২৭২, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৫৯ জন আক্রান্ত। পাশাপাশি হাওড়া (৭৯), হুগলি (৭৩), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৭৯), নদিয়া (৪৫), দার্জিলিং (৩২), জলপাইগুড়ি (২৫)-তেও আক্রান্ত বাড়ছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন জন মারা গিয়েছেন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা ওই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা মণ্ডলঘাটের বাসিন্দা। ৩৮ বছরের এক ব্যক্তি ময়নাগুড়ির হেলাপাকরির বাসিন্দা। জলপাইগুড়ির গাদরা এলাকার বাসিন্দা ২৬ বছরের এক যুবক রয়েছেন। তবে এই তিন জনের করোনার টিকা নেওয়া ছিল না বলে সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গেই রয়েছেন। গত দু’দিন প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি করোনা পরিস্থিতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাস্তবে অবশ্য সংক্রমণ বাড়ছে বলেই চিকিৎসকদের একাংশের দাবি।
তবু করোনা বিধি না মানার প্রবণতা বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। আর একটি প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ চিকিৎসকদের। তা হল, সর্দি, কাশির মতো সামান্য উপসর্গ থাকলেও অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে নারাজ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক শ্রেণির নাগরিক এ প্রশ্নও তুলছেন, করোনা বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি বাড়ছে না কেন? রাজ্যের এক সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বার বার বলা হচ্ছে, টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত। এর অর্থ এই নয় যে, করোনা ভাইরাস উধাও হয়ে গিয়েছে।’’